তাল শাঁস বহুগুণ সমৃদ্ধ এক উপকারী মৌসুমী ফল

তাল শাঁস বহুগুণ সমৃদ্ধ এক উপকারী মৌসুমী ফল

রিমা ঘোষ -: ‘তালের বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিল’- একটা সময় ভাদ্র মাসের জন্মাষ্টমির পরের দিন একদল মানুষ খোল বাজাতে বাজাতে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এই গানটি করে বেড়াত। পাকা তালের মাড়ি দিয়ে তৈরি তাল ফুলুরি, তাল মাড়ির রুটি ও লুচি সহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার খায়নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে তাল গাছের নীচে পড়ে থাকা পাকা তাল কুড়িয়ে আনন্দ ছিল অন্যরকম। গত বছর শহর এলাকায় চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। একইভাবে তালের শাঁসও একটা সুস্বাদু ও উপকারী খাদ্যোপাদান।

ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ত বর্তমান  প্রজন্মের কাছে মৌসুমী ফল বা সিজন্যাল ফ্রুট শব্দটা অপরিচিত হলেও আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল শুধু আমাদের রসনার তৃপ্তি আনেনা এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। চিকিৎসকদের মতে যেকোনো মৌসুমি ফল শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এগুলি যেমন জিভের স্বাদ বদলাতে শুরু করে তেমনি নির্দিষ্ট ঋতুতে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।  প্রতিটি মৌসুমি ফলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণেল ঘাটতি পূরণ করে। তালের শাঁস  হলো এরকমই একটি উপকারী মৌসুমী ফল।

ফলের ঋতু গ্রীষ্মকালে খুব অল্প সময়ের জন্য তালশাঁস পাওয়া যায়। সময় অনুযায়ী এগুলি নরম, অল্প নরম ও শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। ব্যক্তি বিশেষে খাওয়ার তারতম্য দেখা যায়। কেউ খুব নরম পচ্ছন্দ করে তো কেউ অল্প নরম বা শক্ত প্রকৃতির। তালশাঁস খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর মধ্যে আছে  অনেক পুষ্টিগুণ। 

তালের শাঁসের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জল আছে যেটা গ্রীষ্মকালে শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এমনকি জলের ঘাটতি জনিত এলার্জির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে আছে কার্বোহাইড্রেট, অল্প পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। তাল শাঁসে আছে শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেগুলি মানব দেহের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে গরমের সময় ক্লান্তি দূর হয় ও শরীর সতেজ থাকে। এছাড়াও তাল শাঁসে আছে ফাইবার ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে ও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লো-ক্যালরির খাবার তালশাঁসে জল ও ফাইবার থাকায় এটা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে ক্ষুদাভাব কমে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

তালশাঁস উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া হলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কখনো কখনো পেট ব্যাথা করে, পেটের নানান সমস্যা দেখা দেয়।

শহরের লোকেরা সেভাবে তাল শাঁসের সঙ্গে পরিচিত নাহলেও এক সময় গ্রীষ্মকালে গ্রামের মানুষদের দল পাকিয়ে তাল শাঁস খেতে দেখা যেত। বর্তমান প্রজন্মের তাল শাঁসের প্রতি অনীহা ও তালগাছ কেটে ফেলার জন্য অতীতের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায়না। 

তার মাঝেও গ্রীষ্মকালে গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ তাল নিয়ে জাতীয় সড়কের ধারে অথবা শহরের কোনো এক জায়গায় বসে তাল শাঁস বিক্রি করতে শুরু করেন। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সঙ্গে দূরদূরান্ত থেকে আগত ব্যক্তিরা গাড়ি থামিয়ে তাল শাঁসের স্বাদ আস্বাদন করে। বিক্রিও হয় ভাল।

বিশিষ্ট চিকিৎসক কবিতা চৌধুরী বললেন – সব ধরনের মৌসুমী ফলের একটা নিজস্ব গুণ আছে যেগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে প্রত্যেকের খাদ্য তালিকায় তাল শাঁস সহ মৌসুমী ফল অবশ্যই থাকা উচিত।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )