
ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযান – প্রেস কনফারেন্স করলেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা, এডিজি দক্ষিণবঙ্গ, সিপি হাওড়া এবং এসপি হাওড়া গ্রামীণ
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী: ফাইনাল এক্সপোজার:- আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনার জন্য অপরাধীর শাস্তির দাবি অরাজনৈতিক পথ পরিত্যাগ করে ফিরে এসেছে চিরপরিচিত রাজনৈতিক পথে। অপরাধীর শাস্তির পরিবর্তে বড় হয়ে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। এই পরিস্থিতিতে 'ছাত্র সমাজ' নাম দিয়ে ২৭ শে আগস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদিও এই নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব এইরাজ্যে নাই। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ একটা অশান্তির আশঙ্কা করছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এইসব ভিডিওর কথোপকথন সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয় সেটা সমর্থন করে। তারজন্য রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা, এডিজি দক্ষিণবঙ্গ, সিপি হাওড়া এবং এসপি হাওড়া গ্রামীণ ২৬ শে আগস্ট নবান্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা বলেন - বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা খবর পাচ্ছি ২৭ তারিখ নবান্ন অভিযান বলে একটা সংস্থা আমাদের কাছ থেকে এখনও কোনো অনুমতি নেয় নি। সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে প্রশাসন তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে পারবে। নবান্ন একটা রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। পুলিশের কাছে আবেদন করলে পুলিশ ঠিক করবে তারা অনুমতি দেবে কি না। এটা আইনত বেআইনি। যারা এই অভিযানের ডাক দিয়েছেন তারা যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন তাহলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেবো। অবশ্যই আইনগত ভাবে। বিভিন্ন সোর্স থেকে যে ইনপুট আমাদের কাছে আছে তাতে আমাদের মনে হচ্ছে ২৭ তারিখের এই অভিযানের মধ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হতে পারে । আপনারা জানেন ওইদিন একটা পরীক্ষা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার জন্য আমরা ব্যবস্থা করবো। সাধারন মানুষের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্যেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা এই অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন হাওড়া পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তারা এখনও পুলিশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। এমন কি সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, যারা এই অভিযানে যোগ দেবেন বলেছিলেন তারাও হাওড়া পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে নি।
এটা বেআইনি অনুষ্ঠান। আমরা সাধারন মানুষ কে বলব আপনারা এই প্রোগ্রামকে অ্যাভয়েড করুন।পাশাপাশি তিনি বলেন- ১৪ তারিখের ঘটনায় আমাদের ইনটেল কী ছিল সেই বিষয় নিয়ে আমরা উপযুক্ত জায়গায় আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। আমরা সব রকম তথ্য সংগ্রহ করছি। কিন্তু সেই তথ্য এই মুহূর্তে সর্বসমক্ষে আনতে পারছি না। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার বলেন - পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে ডাক দেওয়া হলেও এই সংস্থার নাম এর আগে আমরা কখনও শুনিনি। শুরু থেকে বলা হচ্ছে এটা অরাজনৈতিক। এদের ফেসবুক পেজ থেকে কাদের ফলো কর হয় সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ওই দিন অর্থাৎ সর্বভারতীয় ইউজিসি নেট পরীক্ষা রয়েছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি না ছাত্র সমাজের নাম করে ছাত্রদের পরিপন্থী এই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো কেন?
যারা অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাদের একজন গতকাল কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিষয়টি আমরা আদালতের সামনে আনবো।
আমরা খবর পাচ্ছি কালকের এই আন্দোলনের সময় কিছু দুষ্কৃতী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন। যারা কালকের আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছেন, তাদের আমরা চিহ্নিত করনের চেষ্টা করছি। কোনো প্ররোচনায়, ফাঁদে পা দেবেন না। সবাইকে অনুরোধ করবো এই চক্রান্তে পা দেবেন না। দুটি সমাবেশই সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি।
হাওড়া পুলিশের পক্ষ থেকে সংগঠকদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছিলো আপনারা কতজন আসবেন, কত গাড়ি আসবে সব কিছু জানাতে। এটা জানানো আইনের মধ্যে পড়ে। নবান্ন ১৬৩ বিএসএস বা ১৪৪ ধারার মধ্যে পড়ে। ফলে নবান্ন বা তার সন্নিহিত এলাকায় ৫ জনের বেশি জমায়েত করা বেআইনি। সংগঠকরা আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের কাছে কোনো অনুমতি প্রার্থনা করেন নি। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে আর জি কর কান্ডের প্রেক্ষিতে কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পুলিশ বাধা দেবেনা, কিন্তু আইনসম্মত বিধিনিষেধ রাজ্য কার্যকর করবে না, এমনটাও নয়। ইউজিসি নেট পরীক্ষার কারণে কাল পর্যাপ্ত পুলিশ রাস্তায় থাকবে। বিশেষ বাস থাকবে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে। একটা দুঃখজনক ঘটনাকে সামনে রেখে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা চলছে। আমরা দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করণের কাজ করছি। সময় মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকাশিত ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন – যারা লাশ ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন বা গুলি চালানোর কথা বলছেন তারা নিশ্চয়ই কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ নন। আমরা সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবো। এখন দ্যাখার একটি দুঃখজনক ঘটনাকে সামনে রেখে নবান্ন অভিযানের নাম করে শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার কোনো অপচেষ্টা হয় কিনা? যদি হয় সেক্ষেত্রে সবদিক বজায় রেখে পুলিশই বা কিভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সেটাও দ্যাখার। তবে সবচেয়ে চিন্তিত আছে পরীক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।