
দেবীর বোধনের পর সপ্তমীর সকালে নদীতে তিনটে ঘট ভরা হয়
তন্ময় মাহারা: মালদা:- দেবীর বোধনের পর সপ্তমীর সকালে নদীতে তিনটে ঘট ভরা হয়। একটি কুলদেবীর একটি কলা বউ এবং একটি মা দুর্গার। ঘট ভরে আসার সময় ঘাট হইতে মন্দির পর্যন্ত পাঁচ রাউন্ড শূন্যে গুলি ছোরা হয়। রীতিমতো সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী উপস্থিতিতে লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্ধুক দিয়ে এই গুলি ফায়ার করা হয়। রায় বাড়ির এমন পুজোর প্রচলন দেখতে ভিড় করেন গ্রামবাসীরা। ২২৪ বছরের পুরনো হবিবপুর ব্লকের তিলাসন গ্রামের রায় বাড়ির দুর্গা পুজোর আজও শতাব্দী প্রাচীন পুরনো সেই নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে চলে আসছে ১৮০০ সালে রায় পরিবারের পূর্বপুরুষ শিবপ্রসাদ রায়ের হাত দিয়েই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। জমিদার পরিবার হিসাবে আজও পরিচিত রয়েছে রায় বাড়ি। সেই সময় এই জমিদার পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নানান ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যর চালানোর ক্ষেত্রেই পূর্বপুরুষ শিবপ্রসাদ রায় দেবী দুর্গার আরাধনায় মত্ত হন। রথযাত্রার দিন প্রথম মাটিও খড় দিয়ে মূর্তি তৈরীর প্রথম কাজ শুরু করা হয়।মহালয়ার দিন পর্যন্ত এই প্রতিবার নির্মাণের কাজ চলে এবং মহালয়ার রাত্রে মায়ের চক্ষুদান করা হয়। অষ্টমী ও নবমীর দিন গ্রামবাসী ও শহরের বহু লোককে কার্ডের মাধ্যমে নিমন্ত্রিত করা হয়।রাই পরিবারের নবম পুরুষ শ্রী রাকেশ কুমার রায় ওরফে পাপ্পু রায় জানান নিমন্ত্রিত বাদেও যারা এই পুজো দেখতে আসেন তাদের সকলকে জমিদার বাড়ির দিক থেকে নিমন্ত্রিত করা হয়।ধুমধাম করে নবমী পর্যন্ত চলবে পুজো এবং ভোজনের আয়োজন। রায় পরিবারের স্থানীয় মৃৎশিল্পী দুর্গা প্রতিমাটি তৈরি করছেন।
বর্তমানে রায় পরিবারের পুজো উদ্যোক্তা রাকেশ কুমার রায় বলেন, ২২৪ বছরের পুরনো রায় বাড়ির দুর্গা পুজো। মহালয়ার দিন থেকেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়। মূল পুজো আরম্ভ হয় ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়। সপ্তমীর সকালে নাট মন্দির থেকে সামান্য দূরে পুনর্ভবা নদীতে ঘট ভরা হয় এবং কলা বউকে স্নান করানো হয়। তাদের প্রয়াণের পর এখন আমরাই পূর্বপুরুষের এই স্মৃতি টিকিয়ে রেখেছি। তবে যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি এলাকার শান্তি রক্ষা এবং পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই শূন্যে গুলি ছোঁড়ার প্রচলন রয়েছে। দশমীর দিন পরিবারের রীতি মেনেই দেবী দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হয়। দশমীর দিন চলতে থাকে আদিবাসী নৃত্য ও খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ।