স্বতঃ-অনাক্রম্য রোগ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক আলোচনা হলো গুসকরায়

স্বতঃ-অনাক্রম্য রোগ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক আলোচনা হলো গুসকরায়

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান-: এবার কি তাহলে সেই চরম পরিণতি ঘটতে চলেছে - 'সবাই কথা কবে, তুমি রবে নিরুত্তর'! আর কোনোদিনই দেখা হবেনা একমাত্র সন্তানের সঙ্গে? স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, বাবা-মা সহ সমস্ত আত্মীয়স্বজনদের ছেড়ে চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই ভাবনা তখন আচ্ছন্ন করে ফেলেছে গুসকরা শহরের মধ্য তিরিশের স্বভাব চনমনে শ্রেয়সী চ্যাটার্জ্জীকে। আচ্ছন্ন করবেই বা না কেন! চিকিৎসার জন্য ততদিনে দেশ তথা এই রাজ্যের নামকরা বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে আসা হয়েছে। সারা শরীরে অসংখ্য কাটাছেঁড়ার দাগ। কিছুতেই সঠিক রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছেনা। এদিকে জলের মত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবুও হাল ছাড়তে রাজী নয় পরিবারের সদস্যরা। কারণ তাদের আদরের শ্রেয়সী যে স্বতঃ-অনাক্রম্য অর্থাৎ অটো-ইমিউনল রোগে আক্রান্ত। মানব শরীর অসংখ্য কলা দিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে আছে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। এরাই শরীরে প্রবেশকারী রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে। কোনো কারণে এই স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে যে রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় সেটাই স্বতঃ-অনাক্রম্য রোগ নামে পরিচিত।

কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন ভুলে যায় তেমনি শত্রু ও সুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য ঠিক করতে পারে না। উল্টে শরীরের সুস্থ কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে দুর্বল করতে থাকে। বছর দু'য়েক আগে চনমনে শ্রেয়সীর সমস্যার শুরু হয় হঠাৎ 'কিছুতেই ভাল না লাগা থেকে'। ধীরে ধীরে অন্যান্য সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। নিজেও হতাশ হয়ে পড়ে। রোগ নির্ণয়ের জন্য চলতে থাকে একাধিক পরীক্ষা । অবশেষে তার রোগ ধরা পড়ে। আপাতত উপযুক্ত চিকিৎসায় বর্তমানে সে সম্পূর্ণ সুস্থ। গুসকরা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ কালচারাল সেণ্টারে আয়োজিত এই আলোচনা সভার প্রধান বক্তা ছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি ও রিমেটোলজির বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. অর্ঘ্য চট্ট্যোপাধ্যায়। তিনি তার দীর্ঘ বক্তব্যে এই রোগের বিভিন্ন উপসর্গ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি রুগী ও ডাক্তারদের মধ্যে সমন্বয় সাধন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন রোগটি পুরোপুরি নিরাময় করা না গেলেও সঠিক

চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পাশাপাশি তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের এই রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বতঃ-অনাক্রম্য রোগ নির্ণয়ের জন্য একাধিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে শ্রেয়সী তার বক্তব্যে এই রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রায় দু'বছরের লড়াইয়ের কাহিনী তুলে ধরেন। উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে তিনি অনুরোধ করেন - নিজে সচেতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীকে এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করুন। আশ্রমের পরিচালনা সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেয়সীর পরিবারের সদস্য এবং গুসকরা শহরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ সমস্যা প্রশ্নের আকারে ডাক্তার বাবুর সামনে তুলে ধরেন। এর আগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে আলোচনা সভার শুভ সূচনা করেন ডা. চট্টোপাধ্যায়। তাকে সহযোগিতা করেন অন্যান্যরা।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )