বোবা মেয়ের কান্না

লিপিমিতা তনুশ্রী (কলকাতা)

পারত না সে কথা বলতে, পেত না সে শুনতে
ইশারায় জীবন তার দীন দরিদ্র কক্ষে।
কতটা বিচার পাবে সে এই মহান তালুকে!

ছবি দেখে চমকে উঠলে —
সেই লোভী চোখ, ক্রূর হাসি, দাড়ি-গোঁফ ঠাসাঠাসি!
ভয়ে সে সরে গেল, শিউরে উঠল, চোখ ঢাকল হাতে;
বলতে না-পারা কথা তখন চাপা আর্তনাদে।
হঠাৎ সেদিন নিরিবিলিতে একলা পেয়ে
ফুলের মতো শিশুটিকে করলে তছনছ,
এই তো সুযোগ, এই তো সময়—
কেমন করে বলবে কথা মূক যদি হয়,
চটুল চোখ টিকালো নাক রঙটাও বেশ আপেলপানা
দেখলে কি আর ধরে রাখা যায় কামপ্রবৃত্তি পৌরুষয়ানা।
এই তো মওকা, দমকা ঝড় ঘরের দরজা খুল্লাম খুল্লা,
কান্না তখন গোঙানি-স্বরে টালির চালের ফাটল হতে
আসছে ভেসে রক্তাক্ত শরীর চুঁয়ে।

সে কান্না ছোঁয়নি সংবিধান, ছোঁয়নি গণতন্ত্র
পৌঁছায়নি উপরতলার কানে মহান গুনীজন যেখানে
আরাম-বিলাসে, মেকি বর্মের আড়ালে।
ভাবলে পরে পাঁজরে পাঁজরে আগুন জ্বলে
শিরায় শিরায় কাঁপন জাগে ভয়াবহ আর তীব্র ধিক্কারে ;
এত নিষ্ঠুর নৃশংসতা পুরুষত্বের আস্ফালন!
কি জঘন্য! নরাধম পিশাচ সমতুল্য!
পাশব প্রবৃত্তির নেই শেষ,
হায়! এই আমাদের সমাজ, এই আমাদের দেশ!!

পায়নি মেয়েটা বিচার, শাস্তি পায়নি সে নরাধম
বরং কিছুদিন গা-ঢাকা আড়াল আবডালে
তারপর যথারীতি বহাল তবিয়তে বুক ফুলিয়ে
আবার এদিক-ওদিক অন্য কোন মওকা,
অন্য কোনো ফুল, নজর যেন শ্যেনদৃষ্টি চিল-শকুন
দলা পাকিয়ে তছনছ করবে আবার
নখর দন্ত বীর্যবান পুরুষালী দাপট মহার্ঘ্য অস্ত্র যখন আছে,
আর মহামতি ওপর মহলের হাত যখন শিরোপরে
তখন এমন অনিষ্ট অনাচার ভ্রষ্টাচার চলুক না ক্ষতি কি,
ক্ষতি যার তার হোক, কার কিবা যায় আসে
আগে তো সে সুখ মেটাক পৌরুষের দম্ভ নিয়ে।

ছোট্ট মেয়েটা জানতো না একেই বলে রেপ বা ধর্ষণ
শুধু মনের মধ্যে জন্মেছিল ভয়-ঘৃণা-বিদ্বেষ।
পেয়েছিল শুধু তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা।
মা যে তার পরিচারিকা, বাবা যে তার মদো-মাতাল
নেই অর্থবল, নেই লোকবল, নেই সামাজিক মান
কে লড়বে তার হয়ে, কোর্ট-কেস বহুদূর জল
আছে শুধু ফুটপাত ধূ-ধূ চর অন্ধকার ভবিষ্যত।।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )