২১শে ফেব্রুয়ারি
দীপশিখা পাত্র খাঁ (কদমতলা, হাওড়া)

এই শুনছো, ফোনটা দাও তো। সুবিমল ঘুম জড়ানো চোখে নীপার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে, 'ফোন ছাড়া তুমি অচল'।
কটমট করে বরের দিকে তাকিয়ে নীপা ফোনে টাইপ করতে শুরু করে।
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস এর একটা সুন্দর ছবি খুঁজে পোস্ট করে ফেসবুক নিউজফিড আর হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে।
এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ে টুকটাক কাজ নিয়ে।হঠাৎ নন্দিনী ছুটে এসে বলে, 'মা,মিস বলেছেন আজ ভাষা দিবসে কিছু যেন বাড়ি থেকে শিখে গিয়ে স্কুলে পারফর্ম করি।'
নীপা বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,তোদের স্কুলের এই এক বাড়াবাড়ি, কনভেন্ট স্কুল আবার পাতি বাংলা নিয়ে আদিখ্যেতা। গুগুল দেখে যা পারিস করে নে।
বাংলা তো ভালো করে পড়তেই পারি না মা, ইংরেজি থেকে ট্রান্সলেট করলেও অর্ধেক ভালো করে উচ্চারণ করতে পারবো না। বাংলা আমার আসে না মা।
বাংলা শেখার জন্য তো তোমার পিছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করছি না মা।
সুবিমল আর স্থির থাকতে পারে না, এগিয়ে এসে বলে, মামণি, চিন্তা করিস না নিজের মাতৃভাষা নিজের রক্তে প্রবাহিত ,অবশ্যই তুই বাংলা পারবি, শুধু একটু যত্নের দরকার,ঠিক চারাগাছে জল দেওয়ার মতো।বাঙালি হয়ে বাংলা না জানা নিজের মায়ের অসম্মানের মত।অন্য ভাষা তখনই তুমি রপ্ত পরতে পারবে যখন নিজের মাতৃভাষার প্রতি যত্নশীল হবে।
'নীপা' স্ট্যাটাস দিয়ে ভাষা দিবস পালন নয়, বাংলা ভাষার প্রতি যত্নশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া খুব দরকার।
নীপা মুখ বেঁকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, নন্দিনী বলে ওঠে, 'বাবা, আমাকে অনেক বাংলা গল্প বই কিনে দিও ।'