কুমোর পাড়ার কর্ণ

লিপিমিতা তনুশ্রী (কলকাতা)

কুমোর পাড়ার কর্ণ সে
বয়স বেশি নয়,
সকাল হলেই চাকের গায়ে
সিঁদুর লেপে দেয়।
পড়াশোনা তার বেশি দূর নয়
বুদ্ধিতে সে প্রখর
বাপ-কাকাদের পেশা ধরে
হাতের কাজে তুখোড়।

সকাল হলেই মাটির গায়ে
দলাই-মলাই চলে
কখনো হাত কখনো পা
মাটি ঠেসতে লাগে,
এমনভাবে মাটি যখন
তৈরী হলো সরেশ
কর্ণ তখন বসল নিয়ে
সেই মাটিরই আবেশ।

মন্ড কেটে চাকের গায়ে
হাতের কৌশলে
নিপুণ নিখুঁত গ্লাস বানায়
ভোজবাড়ি আসলে
হাঁড়ি-কলসি-মালসা-সরা
শতেক রকমারি
কোনটা ছোট কোনটা বড়
যেমন দরকারি।

শীতকালেতে পিঠেপুলি
পিঠে-খোলা খুব জরুরী
কর্ণ তখন শীতের রাতে
পোনের আগুন পোহাতে থাকে।
হাটবারের ওই দিনগুলোতে
ঝাঁকাবোঝাই মাটির পাত্রে
কর্ণ তখন আনন্দতে
দিবস-রাতি অপার খাটে।

যখন গড়ে হাঁড়ি কলসী
কাদা-মাটি হাত ভর্তি
হাঁ করা মুখ চাকতি জুড়ে
ভাতের স্বপ্ন বক্ষ জুড়ে
পিপাসার জল কলসী ভরে
কর্ণ তখন আপনমনে
আলতো হাতে সূতো দিয়ে
সে মুখগুলো তুলে রাখে।
রোদে পুড়ে শক্ত হলে
সেগুলো আবার সাজায় পোনে
হাতের চাপড় মালসা-সরায়
কথার ফাঁকেও হাতটা চালায়।

এমনি করেই যাচ্ছিল বেশ
আসা-যাওয়া দিনের মাঝে
হঠাৎ করে উঠল ঝড়
আধুনিকতার তকমা জুড়ে।
মাটির গ্লাস, মাটির থালা
ঘরে ঘরে পায় না শোভা,
মাঝে মাঝে শৌখিনতায়
কোথাও কোথাও যায় চলে যায়।

তবুও কর্ণ হাল ছাড়ে না
বুদ্ধি দিয়ে জীবন চালায়
যখন দ্যাখে শহর-গাঁয়ে
মেলা পার্বণ জাঁকজমকে
তখন সে পসরা সাজায়
হাওয়া-ঘন্টি, ফুলদানিতে;
কলসীর গায়ে কলের মুখ
কলিকালের গ্রীষ্ম-সুখ
জলের বোতলও মাটির হলো
লাগিয়ে দিলো শৌখিন মুখ।
বাহ্ রে বাহ্! দারুণ তো বেশ!
কর্ণ এখন হাতের গুণে
বুদ্ধিবলে যাচ্ছে বিদেশ।
সেখানে হবে প্রদর্শনী
হাজার মেলা রকমারি
দেখবে সেথায় সূক্ষ্ণ কাজ
মৃৎশিল্পের কেমন বাজার।

স্বপ্ন যখন পূরণ হলো
কর্ণ গাঁয়ে ফিরে এলো
সাটিফিকেট মেমেন্টো
সে কি এসব জানত!
গাঁয়ের সুনাম পাড়ার যশ
কর্ণ হলো বীর মহান।
সবাই ভাবলে —
কর্ণ বুঝি অনেক পয়সা কামিয়ে এলো
কর্ণ বলে, ওহে ভাইসব
পয়সা নয় গো, সম্মানের দাম—
তোমরা খাটো আমার সাথে
সবাই যাব বিদেশেতে,
একসাথে সব যাব মোরা
জয়ের মালা ছিনিয়ে নিতে।
মন ভেঙো না, ভেঙে পড়ো না
কালের সাথে তাল মিলিয়ে
চলতে শেখাই আসল শিক্ষা।
বড় কোনো শোকেসে নয়
মেমেন্টোটা সে রেখে দেয়
মাটির দেওয়াল তাকের ওপর
দেশের মাটি জয়ের স্মারক।।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )