বাপি

রুনা মুখার্জী (কলকাতা)

দেশের বাড়ি যাওয়ার সময় কেক কিনে তুমি খেতে না চাইলে,
যখন জোর করে কেকটা তোমার মুখে ভরে দিয়েছিলাম,
তখন তোমার পাশে বসে থাকা কাকুটি আমাকে দেখিয়ে তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল,
এটা কি আপনার মেয়ে?
তুমি বলেছিলে হ্যাঁ এটাও আমার মেয়ে,
অর্থাৎ আমার পুত্রবধূ, আমার ঘরের লক্ষ্মী। ঘরের
তোমার দাদুভাই পেটে থাকা অবস্থায়,
ওয়াটার হিটারে জল গরম করে একদিন যখন বালতিটা আমার স্নানের জন্য বাথরুমে রেখেছিলে,
তখন আমি বলেছিলাম কষ্ট করে তুমি কেন বালতিটা রাখলে বাপি?
কিছুতেই আমি তোমার জল নেব না।
তুমি বলেছিলে, আমি তো তোর বাপি রে মা। এখন তোকে ভারী বালতি তুলতে নেই।
তাছাড়া এসব আমাদের নতুন অতিথির জন্য তো করছি।
বাড়ি থেকে চাকরির জায়গায় আসার সময়,
সকলকে ছেড়ে আসার সময় যখন আমি কাঁদতাম,
তখন তুমি বলতে কিছুদিন পর তো আমরা যাব মা।
আবার কিছুদিন পর তোমরা আসবে,
তাই কেঁদোনা মা ভুবনেশ্বরী।
তুমি না গেলে যে আমার বাবুনটা একা হয়ে যাবে মা।
আমার একটু শরীর খারাপ হলে তোমার ছেলেকে দশবার ফোন করে আমার কথা জিজ্ঞাসা করতে। আমি যদি বলতাম বাপি আমি ঠিক আছি।
তাহলে বলতে জ্বর কমেনি, তবুও বলছে আমি ঠিক আছি বাপি।
তোমাদের শরীর খারাপ হলে তোমাদের বারন অমান্য করে না বলে যখন বাড়ি চলে যেতাম হঠাৎ করে,
তখন আমাদের দেখে জল ছল ছল চোখে বলতে দাদু ভাইয়ের পড়ার ক্ষতি করে কেন তোরা চলে এলি মা!
মা যখন আমার জন্য পোশাক কিনতো আর আমি বলতাম এত টাকা কেন খরচ করছ মা?
আমার তো অনেক পোশাক আছে,
তখন তুমি বলতে তোর মা ঠিক করেছে।
তোর বাপি আছে তোর চিন্তা কি মা?
কোন সময় আমাকে একটু বকে ফেললে পাঁচ মিনিট পরেই এসে বলতে,
আমার ভুবনেশ্বরী মাকে কে বকেছে মা?
বাপি বকেছে?
বাপিকে মারবো।
আর আমি বলতাম আমার বাপি আমাকে কত ভালবাসে।
আমাকে বকে না।
আর তুমি হাহা করে হাসতে আর বলতে তোমার খুব ভালো হবে মা।
আরও অনেক স্মৃতি বারবার ভেসে ওঠে চোখের তারায়।
কারন আজ দুটো বছর তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেছো আকাশের তারা হয়ে,
তবুও আজও তোমায় অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি বাপি।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )