
ডাইনি ফাতোয়ায় আতঙ্কে পরিবার,আধুনিক ভারতে কুসংস্কারের আগুন
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
একদিকে ভারত মঙ্গল গ্রহ ও চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আধুনিকতার নতুন শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে দেশের কিছু অঞ্চলে আজও “ডাইনি” নামক কুসংস্কারের আগুনে নিরীহ জীবন পুড়ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী সালানপুর থানা (কল্যাণেশ্বরী ফাঁড়ি) এবং মাইথন থানা এলাকায় এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে এক তান্ত্রিকের ফতোয়া এক নারী ও তার পরিবারকে মৃত্যুর ছায়ায় ঠেলে দিয়েছে।
ঘটনাটি মাইথন থানার অন্তর্গত বড়মুড়ি গ্রামের। সেখানকার বাসিন্দা হরিলাল বাস্কি (৪০) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসার পরও তার স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় হতাশ পরিজনরা শেষমেশ তাকে পার্সনাথ সিঙ্ঘাপুরার রাহির বেড়া গ্রামে এক তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যান। এই দুঃখের মুহূর্তে হরিলালের চাচাতো ভাই রাজেন্দ্র বাস্কি এবং তার স্ত্রী অঞ্জলি বাস্কি, যিনি কল্যাণেশ্বরী লেফট ব্যাঙ্কের বাসিন্দা, তারাও পার্সনাথে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে যা ঘটল, তা অঞ্জলি ও তার পরিবারের জীবনকে ঝড়ের মুখে ঠেলে দিল।
তান্ত্রিকের ফতোয়া অঞ্জলিকে ঘোষণা “ডাইনি”
জানা গেছে, তান্ত্রিক পরিজনদের সামনেই অঞ্জলি বাস্কিকে “ডাইনি” বলে ঘোষণা করেন এবং হরিলালের অসুস্থতার জন্য তাকেই দায়ী করেন। এই ফতোয়ার পর অঞ্জলির ওপর হরিলালকে সুস্থ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। আতঙ্কিত পরিবার এই ঘটনার অভিযোগ জানায় কল্যাণেশ্বরী পুলিশের কাছে। কিন্তু বিষয়টি এখানেই থামেনি।
জনতার হামলা: অপহরণের চেষ্টা ব্যর্থ
মঙ্গলবার সকালে বড়মুড়ি গ্রাম থেকে শতাধিক মানুষ ট্রাক্টর ও মোটরসাইকেলে চড়ে কল্যাণেশ্বরীর লেফট ব্যাঙ্কে পৌঁছে যায়। ক্ষুব্ধ জনতা রাজেন্দ্র বাস্কি ও তার স্ত্রী অঞ্জলিকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে কল্যাণেশ্বরী পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতাকে বাধা দেয় এবং তাদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। পুলিশের কড়া হুঁশিয়ারির পর জনতা ফিরে গেলেও অঞ্জলি ও তার পরিবারের ওপর বিপদের কালো মেঘ ঘনিয়ে আছে।
ভয়ের ছায়ায় পরিবার তান্ত্রিকের এই ফতোয়ার পর অঞ্জলি বাস্কি ও তার পরিবারের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিবারের আশঙ্কা, তাদের সঙ্গে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ প্রশাসন “ডাইনি”র মতো অন্ধবিশ্বাসকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছে, কিন্তু জনতা কোনও কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। অঞ্জলির পরিবার জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছে, তবু ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের উদ্বেগ অব্যাহত।