প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ” আনন্দ মেলা “

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ” আনন্দ মেলা “

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :- উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অধীন সিরাজবাটি চক্রের অন্তর্গত মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকা ও গ্ৰামবাসীদের সহযোগিতায় ও অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল বার্ষিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আনন্দ মেলা।এই উৎসবে বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীবৃন্দ তাদের নিজেদের হাতে তৈরি বিভিন্ন খাবার বিক্রি করে বিভিন্ন মেলার বিভিন্ন মন্ডপে। সমস্ত ছাত্র -ছাত্রীবৃন্দ তাদের সমস্ত খাদ্যদ্রব্য গুলি বিক্রি করে। কোন কোন ছাত্র – ছাত্রী বলে, তাদের তৈরি খাদ্য দ্রব্য গুলি বিক্রি করে তার লাভের টাকায় তার ভাই – বোনের জন্য খাতা – পেন কিনবে। কোন কোন ছাত্র – ছাত্রী বলে, ‘ মা ‘ অসুস্থ। মায়ের জন্য ঔষধ কিনবো।কেহ কেহ বলে, বিক্রির লাভের টাকা মা – বাবা কে দেব ঘরের খরচের জন্য। ছাত্র -ছাত্রীদের এই কথায় প্রমাণ হল মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষিকাবৃন্দ এই সমস্ত শিশু পড়ুয়াদের ছোট থেকেই মানবিক মূল্যবোধ এর শিক্ষা দিচ্ছেন বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি।

এই উৎসব প্রসঙ্গে মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ হাজরা বলেন,”‘ উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র তথা আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত সিরাজবাটি চক্রের অধীনে সাতাত্তর টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্র আছে।আমরাই বেশ কয়েক বছর আগে এই বিদ্যালয়ে ছাত্র – ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকা ও গ্ৰামবাসীদের সহযোগিতায় ” আনন্দ মেলা ” উৎসবের সূচনা করেছিলাম।তারপর আমাদের দেখাদেখি আন্যান্য কয়েকটি বিদ্যালয় তাদের বিদ্যালয়ে এই মেলা করছে ” । তিনি এও বলেন,” স্কুল শুধুমাত্রই শিক্ষার অঙ্গ নয়।আমরা শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক ভাবে সমাজের পাশে থাকি। সেটাই আমরা সারাবছর জুড়ে করে থাকি, এবং ভবিষ্যতে ও নানা সমাজসেবা মূলক কাজ এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে করতে চাই , অবশ্যই ছাত্র – ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকা ও গ্ৰামবাসীদের সহযোগিতায়” । তিনি এও বলেন, ” এই বিদ্যালয় শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজের সাথে যুক্ত আছে।আমরা ছাত্র – ছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধ গঠনের শিক্ষা, সমাজসেবা মূলক কাজের মানসিকতা তৈরী,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শিক্ষা দিই। নানান খেলাধুলা শেখানো,সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন, নাটক শিখানো হয়। ইতিমধ্যেই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র – ছাত্রীরা জেলায় খেলাধুলায় ও সংস্কৃতিতে প্রশংসিত হয়েছে এবং হচ্ছে ও ” । তিনি আরো বলেন,” গ্ৰামে ভাদ্র মাসে অধিকাংশ ছাত্র – ছাত্রীদের বাড়িতে ‘ মা মনসা ‘ – র রান্না পুজা ( যা অরন্ধন উৎসব নামে পরিচিত) হয়। সেই রান্না পুজায় অনেক ছাত্র – ছাত্রীর অন্য ছাত্র – ছাত্রীদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ থাকে।যাদের বাড়িতে এই রান্না পুজো নেই,যারা অন্য ছাত্র – ছাত্রীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ পায় না , তারা খুব মনোকষ্টে থাকে। তাদের সেই মনকষ্ট দূর করার জন্য আমরা বিদ্যালয়ে ” রান্না পুজা ” উৎসব বাড়ির মতো সব রান্না করে থাকি। এই উৎসবে ছাত্র – ছাত্রীরা যে যার সামর্থ্য মতো চাল,ডাল , আলু,আনাজ রান্নার অন্যান্য উপকরণ দেয়। গ্ৰামবাসীরা তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল দেয়। অভিভাবক – অভিভাবিকারা দোকান – বাজার এর সামগ্ৰী দিয়ে সহযোগিতা করে। বিদ্যালয়ে ‘ রান্না পুজা ‘ – য় সকল ছাত্র – ছাত্রীরা আনন্দ সহকারে খাওয়া- দাওয়া করে।

 ‘ আনন্দ মেলা ‘ , ক্রীড়ানুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে অভিভাবকদের ছিল ফুচকা খাওয়া,হাঁড়ি ভাঙা, মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা প্রতিযোগিতা। ছাত্র – ছাত্রীদের ছিল ‘যেমন খুশি সাজো ‘প্রতিযোগিতা। বিদ্যালয়ে শ্রেণীগত ভাবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী ছাত্র – ছাত্রীদের পুরষ্কার বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফল প্রতিযোগীদের পুরষ্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।সারাদিন ব্যাপী ‘ আনন্দ 

মেলা ‘ , ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষারত্ন পুরষ্কার প্রাপ্ত সোনামুই সাবালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার পাত্র, শিক্ষক পবিত্র লাঙ্গল, খড়দহ প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাকেশ পাত্র, শিক্ষক নিমাল্য রায়, শিক্ষক তাপস হাজরা,মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ হাজরা,সহ শিক্ষক সুপ্রিয়, ইন্দ্রনীল,সুব্রত, শিক্ষিকা মণিকা পন্ডিত, শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদার,অরুপ মেউর, সমাজসেবী ভব পন্ডিত প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সারাদিন ব্যাপী এই উৎসবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জনতার ঢল নেমে ছিল।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )