রীলস ভিডিও – পরিণতি ভয়ংকর

রীলস ভিডিও – পরিণতি ভয়ংকর

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী: ফাইনাল এক্সপোজার:- যখন কোনো ভিডিও বা লেখা নেট দুনিয়ায় প্রচণ্ড গতিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন সেটাকে আমরা ভাইরাল বলি। কিছু কিছু ভাইরাল হওয়া লেখা বা ভিডিও অপকারী 'ভাইরাস'-এর মত সমাজে মারাত্মক কুপ্রভাব ফেলে। এই অপকারী 'ভাইরাস' যখন রাশ হারিয়ে 'ভাইরাল' হয় তখন মনুষ্য সমাজের পরিণতি কত ভয়ংকর হতে পারে বছর চারেক আগে করোনার সময় গোটা বিশ্ব সেটা ভালভাবেই টের পেয়েছে। চীন থেকে উৎপন্ন এই ভাইরাল হওয়া ভাইরাসের সৌজন্যে চারিদিকে শুধুই মৃত্যু মিছিল। আতঙ্কে মানুষ গৃহবন্দী। বাঁচার পথ খুঁজতে ব্যস্ত। অসহায় চিকিৎসককুল। সর্বত্রই থরহরি কম্পন। সস্তা ইণ্টারনেট ও অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ের দৌলতে রীলস ভিডিওর হাত ধরে বর্তমান প্রজন্মের একটা অংশ, বিশেষ করে কিশোরীরা, পরিণতির কথা না ভেবে নিজেকে ভাইরাল করার খেলায় মেতে উঠেছে। এরা সবাই টিন এজার। এদের একটাই লক্ষ্য ভাইরাল হওয়ার মাধ্যমে ভিউয়ারস সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এদের পরনে থাকে যথেষ্ট উত্তেজনাকর পোশাক, প্রায় অর্ধ উলঙ্গ। ভিডিওর কনটেণ্ট পুরোপুরি অর্থহীন। তাদের অর্ধ উলঙ্গ পোশাকের জন্য ভিউয়ারস হয় যথেষ্ট। এই সংখ্যাটার জন্য তাদের পরিবার আরও বেশি করে রীলস তৈরি করতে উৎসাহ দেয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ রীলস তৈরি করছে নদীর ধারে, চলন্ত ট্রেনের হ্যাণ্ডেল ধরে, গাছে উঠে অথবা পাহাড়ের কিনারায়। তাদের ভাবনায় থাকে যতবেশি ঝুঁকি নেওয়া হবে ততবেশি হয়তো লোকে তাদের ভিডিও দেখবে। যার ফলে মাঝে মাঝে মৃত্যুর সংবাদ সামনে আসছে। তবুও রীলস তৈরির বিরাম নাই। প্রত্যেকেই ভাবছে তার কিছু হবেনা। যখন হয় তখন সব শেষ। রীলস-এ সবচেয়ে বেশি ভিউয়ারস হয় কিশোরীদের। আজ যে কিশোরী কাল তার বয়স বাড়বে। তার জায়গা দখল করবে অন্য একজন নতুন। ফলে একজনের ভিউয়ারস কমবে অপরজনের বাড়বে। এভাবেই চলতে থাকবে। যার কমছে তার মানসিক অবস্থার কথা কি তার অভিভাবকরা বুঝতে পারবে? এই কমে যাওয়াটা সংশ্লিষ্ট কিশোরী হয়তো সহ্য করতে পারবেনা। ধীরে ধীরে ডিপ্রেসনে চলে যেতে পারে। অপর একটা কুফলও আছে। অধিকাংশ অভিভাবক বুঝতে চায়না 'আমার মেয়ে আমার কাছে ছোট হলেও অপরের কাছে বড়'। অপর ব্যক্তি রীলসের কিশোরীটিকে সন্তানের পরিবর্তে অন্য দৃষ্টিতে দেখে। এই কোদৃষ্টি কিশোরীর জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কুৎসিত মন্তব্যে কমেণ্ট বক্স ভরে উঠতে পারে। সে যখন বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করবে তখন তার বন্ধুমহল কি স্বাভাবিক ভাবে তাকে গ্রহণ করবে? তখন যদি তার কাছে বাড়তি কিছু দাবি করে বসে তখন কি হবে? পরবর্তীকালে সে অন্য সমস্যাতেও পড়তে পারে। এছাড়া আরও নিত্য নতুন সমস্যা তার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। আজ হয়তো সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। তবে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে সেটাও কিন্তু কম বিপজ্জনক নয়। এটা ঠিক কে কি পরবে বা খাবে সেটা সমাজ ঠিক করে দিতে পারেনা। তবে এটা চারদেওয়ালের মাঝখানে থাকলে সমাজ নিশ্চয়ই মাথা ঘামাবেনা। তার বাইরে বের হলে সমাজ মুখ খুলবেই। একদল আঁতেল সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যাইহোক রীলস ভিডিওর নামে নিজের অবোধ সন্তানকে সস্তা জনপ্রিয়তার পথে ঠেলে না দিয়ে অভিভাবকদের উচিত তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। ঝুঁকি সব জায়গাতেই আছে। কিন্তু এটা তো আমন্ত্রিত বিপদ। রীলসের ভয়ংকর পরিণতির কথা ভাবতেই হবে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )