দাবি এক, দফা এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ – উঠছে প্রশ্ন?

দাবি এক, দফা এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ – উঠছে প্রশ্ন?

সাড়াহীন আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকতেই কি বনধ?

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মানুষের মতামত :- আরজি করের তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অপরাধী বা অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি - 'উই ওয়াণ্ট জাস্টিস' অবশ্যই সঙ্গত ও শুরু থেকেই এই দাবি উঠেছে। একই দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন। এই পরিস্থিতিতে 'ছাত্র সমাজ' নাম নিয়ে একটি সংগঠন নবান্ন অভিযানের ডাক দেয়। এই নামে কোনো সংগঠনের নাম এর আগে কখনো শোনা যায়নি। আরজি কর কাণ্ডে যুক্ত অপরাধীর শাস্তির পরিবর্তে এদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। এই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সংগঠনকে সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক দল এই রাজ্যে ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে। সর্বশক্তি নিয়োগ করেও পরপর দু'বার এই দলটি এইরাজ্যের মানুষের হাতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। মুখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলা হলেও যে ভিডিও সামনে এসেছে তাতে অশান্তির আঁচ ছিল স্পষ্ট। এমনকি আন্দোলনকারী হিসাবে যাদের দ্যাখা যাচ্ছে তাদের একটা বড় অংশ যে ছাত্র নয় সেটা স্পষ্ট। তাছাড়া ব্যারিকেড ভাঙা বা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট, পাথর ছোড়া এবং আক্রমণ করা কখনোই ছাত্র সুলভ নয়। এইগুলো তো ক্রিমিন্যালদের কাজ! এখন পুলিশ যদি সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এইসব তথাকথিত ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে তাহলে তাদের ভবিষ্যত তো অন্ধকার? পুলিশ কখন লাঠিচার্জ করেছে বা জলকামান ব্যবহার করেছে সেটা সাধারণ মানুষ টিভির পর্দায় দেখেছে। আপাতত আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা সংক্রান্ত সিবিআইয়ের দাবি কলকাতা পুলিশ খারিজ করে দিয়েছে। ওটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নাই। একটাই অনুরোধ তদন্তের নামে চিটফাণ্ডের মত এই নৃশংস ঘটনাটির পরিণতি যেন না ঘটে। দেখে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি সেই দিকেই যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের একটাই দাবি অপরাধীর শাস্তি। কিন্তু নবান্ন অভিযানে তথাকথিত ছাত্র সমাজের 'দাবি এক, দফা এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ'। এটা তো পুরোপুরি রাজনৈতিক দাবি! কোনো ছাত্র সমাজ কি এই ধরনের দাবি তুলতে পারে? তর্কের খাতিরে মুখ্যমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করেন তারপর কী হবে- এই তথাকথিত ছাত্র সমাজ কি ভেবে দেখেছে? 'আগে পদত্যাগ করুন, তখন দ্যাখা যাবে'- এটা কোনো উত্তর হতে পারেনা। এসব রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে মানায়। যদিও একটি রাজনৈতিক দলের হাতেই ওরা তামাক খেয়েছে। এই প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন উঠে আসছে। পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে হঠাৎ তাদের জন্য নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের দরদ উথলে উঠল কেন? মানবিকতার প্রশ্ন হলে আহত পুলিশদের জন্য তাদের তো দুঃখ প্রকাশ করতে দ্যাখা গ্যালোনা? ছাত্র সমাজের বোঝা উচিত যে দলের সমর্থকরা জেল ফেরত বিলকিশ বানুর ধর্ষকদের মালা পড়ায় বা কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্থাকারীকে সমর্থন করে তাদের সমর্থন নিয়ে কি আন্দোলন করা সাজে? তারা তো একাই একশ। রাজনৈতিক আন্দোলন তার নিজের পথে চলুক। অপ্রয়োজনীয়ভাবে ছাত্র সমাজকে ব্যবহার করা ঠিক নয়। যদিও তারা এই সমাজেরই অংশ। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হাসপাতাল চত্বর এবং আপাতত অভিযুক্ত হিসাবে যার নাম উঠে এসেছে সে বহিরাগত নয়, ওই হাসপাতালেরই কর্মী। পরিবারের সদস্যদের হাতে আক্রান্ত হলে অভিযোগ পাওয়ার আগে প্রশাসনের কিছুই করার থাকেনা। যে মুহূর্তে অভিযোগ সামনে এসেছে পুলিশ প্রশাসনের আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। পরিবারের কর্তা হিসাবে সুপার তার দায় অস্বীকার করতে পারেন না। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে যে দালাল রাজ চলছে, সন্দীপ ঘোষ বা সঞ্জয় রায়ের মত আবর্জনা আছে সেটা কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জানা উচিত। এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায় এড়াতে পারেননা। এটার জন্য তার পদত্যাগও সমর্থনযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ছাত্র সমাজ বা সাধারণ মানুষকে ব্যবহার না করে গণ আন্দোলন করুক। যে আন্দোলনে থাকবে না দলীয় পতাকা, রাজনৈতিক স্লোগান। তার প্রভাব অনেক বেশি। আন্না হাজারের তার প্রমাণ। হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করলে ক্ষতি নিজেদের। আগামীকালও কিন্তু পরীক্ষা আছে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )