
অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক্টর আটক করল পুলিশ
সংবাদদাতা, ফাইনাল এক্সপোজার-: তৃণমূল বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করে এইরাজ্যে তৃণমূলের একশ্রেণি নেতার আয়ের মূল উৎস হলো বেআইনি বালি ও পাথর খাদান, আবাস যোজনা বা একশ দিনের কাজ থেকে কাটমানি আদায় করা, তোলাবাজি ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয় অবৈধ বালি খাদান থেকে। এগুলো তাদের কাছে হীরের খনি থেকেও মূল্যবান। তাইতো দামোদর, দ্বারকেশ্বর, অজয়, ময়ূরাক্ষী সহ এই রাজ্যের একাধিক নদীর বুকে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ বালির খাদান। এইসব খাদান থেকে বেআইনিভাবে বালি উত্তোলনের ফলে একদিকে সরকারের যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে পকেট ভরছে খাদান মালিকদের, শাসকদলের স্থানীয় নেতা সহ একদল দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারিদের। এইসব নদী পার্শ্ববর্তী একশ্রেণির তৃণমূল নেতার বৈভব দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। চমকে দেওয়ার মত দালান বাড়ি, সঙ্গে দামি গাড়ি - তাদের জীবন যাত্রার অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

শুধু কী তাই এইসব অবৈধ খাদান থেকে বালি বহনকারী গাড়ি আটক করে যেকোনো স্থানীয় উৎসবে চাঁদার নামে অর্থ আদায় করা হয়। এও শোনা যায় খাদান মালিকরা নাকি স্থানীয় থানায় 'ভেট' দেয়। প্রশাসনের চোখের সামনে মঙ্গলকোটে অজয় নদের উপর বীরভূমের সঙ্গে সংযোগকারী লোচন দাস সেতু বা বর্ধমানে দামোদরের উপর কৃষক সেতু সহ যেকোনো নদীতে সেতুর একশ মিটারের মধ্যে নদীর বুকে জেসিবি ব্যবহার করে বালি তোলা হচ্ছে। এরফলে সেতুগুলি দুর্বল হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে সেগুলো ভেঙে পড়তে পারে। প্রাণহানির সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। কোথাও আবার পরিবেশের তোয়াক্কা না করে নদীর বুকে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে নদীর গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে। অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়িগুলো যে রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে সেই রাস্তাগুলো অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সব দেখে প্রশাসন নীরব থেকে যাচ্ছে। কারণ অধিকাংশ অবৈধ বালির খাদানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে আছে। খাদান মালিকের মাথার উপর তাদের হাত থাকছে। সংবাদ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। আটক করা হয় অবৈধভাবে বালি বহনকারী গাড়ি।

সম্প্রতি আসানসোলের শাকতোড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ চারটি অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক্টর আটক করে। এরমধ্যে দুটি ট্রাক্টর সুভাষমোড় ও দুটি গাঙ্গুটিয়া রোড থেকে আটক করা হয়। ঘটনায় দু'জন ট্রাক্টর চালককে আটক করা সম্ভব হলেও বাকিরা পালতে সক্ষম হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম, কাঁকসা, গলসী সহ নদী সংলগ্ন বিভিন্ন থানার পক্ষ থেকে অবৈধভাবে বালি বহনকারী গাড়ি আটকের খবর পাওয়া যায়। পুলিশ প্রশাসনের এইসব তৎপরতায় খুব খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি এই ধরনের অভিযান নিয়মিত চালাতে হবে। গ্রেপ্তার করতে হবে অবৈধ বালি খাদানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত নেতা ও তার প্রশ্রয়কারীদের। তবেই হয়তো অবৈধ বালির খাদান বন্ধ হতে পারে। পাশাপাশি শাসকদলের নেতাদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।