জয়ন্তীর লজ্জা

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)
জয়ন্তী বিশ্বজয় করতে চায় তাঁর সাহিত্য সাধনায়
রাতের পর রাত জেগে চলে কবিতার অন্বেষণ,
ঠিক কতগুলো শব্দ হলে কবিতা হয় বোধগম্য হয় না
শুধু অলংকার বিহীন শব্দ, প্রাণ নেই তাতে ,
তবু সে থেমে যায় না, লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে
নাম করা সাহিত্যিকদের সাথে থাকবে তার ছবি
মাঝেমধ্যেই আধো ঘুমে হাতছানি দিয়ে ডাক আসে!
একদিন চাঁদের হাট বসে শহরের সাহিত্য আসর জুড়ে
জয়ন্তী অপেক্ষা করে যদি কোনো ভাবে একটা ছবি ওঠা যায়,
মঞ্চ তখন আলোয় আলোয় রূপকথার রাজপ্রাসাদ যেন,
সহসা সংগঠকের চোখে পরে একটি মেয়ে
বেশ ডাগর শরীরের গঠন, আর একটু আর একটু যদি দেখা যেতো ভালো করে —
অনুসন্ধানি চোখ খুঁজে চলে মেয়েটির গঙ্গা, যমুনা—
উথাল পাথাল বুকে ঢেউ তোলে ঝাউবনের হিল্লোল
উফ্ দৃষ্টি থমকে যায় কেন??
জয়ন্তী অবাক হয়ে দেখে সে আকর্ষণের বস্তু!
তারপর একটা দুটো তিনটে করে বহু মঞ্চ আসে তার জন্য————-
অনুষ্ঠানের আয়োজক এর প্রতিটা ডাকে সাড়া দিতে কবিতা ছুটি নেয় কলম থেকে,
জয়ন্তী পরিচিত না লিখেও মন জয় করেছে মঞ্চ দাপিয়ে!
আধো ঘুমে অলীক স্বপ্ন ভাসে চোখের পাতায়
আর কয়েকটা সিঁড়ি পার করতে পারলেই সাফল্যের চূড়া,
আমন্ত্রণপত্র জানান দেয় ম্যাডাম পেয়েছেন বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র,
বিদেশি হোটেলে শুরু হয় তাঁর কবিতার পর্যালোচনা
নামী সংগঠক একটা একটা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে
তার শব্দ, বর্ণ, রূপক, অলংকার!
আকর্ষণীয় শরীর থেকে সরে যায় সব সবটুকু আবরণ
নগ্নতার খেলায় উন্মত্ত স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রতিষ্ঠার তেপান্তরে,
আহঃ কি যন্ত্রণা, কি বীভৎস যন্ত্রনা শরীর জুড়ে!
সব হারানো মেয়েটি আবিষ্কার করে তার বিশ্বজয় সমাপন,
হিংস্র নখের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত স্তন আর নিতম্ব
বিখ্যাত হওয়ার আগেই যত্নে লালিত নারীত্বের ঘটেছে বিসর্জন,
মৃত্যুর আগে মায়াবী চোখে ঘৃণা ফুটেছিলো কিনা কেউ রাখেনি সেই খবর ,
পরদিন সংবাদপত্রে আত্মীয়-স্বজনেরা পড়েছে সাহিত্যিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দেশবাসী শোকাহত
জীবদ্দশায় নয় কলঙ্কময় মৃত্যুতে জয়ন্তী হয়েছে বিখ্যাত।