কল্পনা

মৌসুমী মন্ডল (কলকাতা)

  প্রায় চল্লিশ বছর  পর হঠাৎ "তার" সাথে আবারও দেখা। চোখে চোখ পড়তেই ভেতরে থাকা হাজারটা প্রশ্ন কেমন যেনো জড়োসড়ো করে দিলো অনিচ্ছায়। নিজেকে শক্ত রাখার সব বাহানাগুলো ব্যর্থতার ঘোষণা শোনালো।

   আর আটকাতে পারলাম না নিজেকে। খুব সাবধানে এগিয়ে গেলাম "তার" কাছে। এখন এই মুহুর্তে "তার"-আমার মনের দূরত্ব হয়তো সমুদ্র সমান। আর দেহের? মাত্র কয়েক ফুট।

চল্লিশ বছরে অনেক কিছু পাল্টেছে “তার”। চোখে এঁটেছে মোটা ফ্রেমের চশমা। টি-শার্ট নয়। হাতা গোটানো হলুদরঙের পাঞ্জাবিতে বেশ অন্যরকম। ক্লিন সেভ নয়, এখন ফ্রেঞ্চকাট দাড়িতে তার মুখ ভর্তি। আগে হাজারবার বলেও রাজি করাতে পারি নি কখনো।

 ঈর্ষা হচ্ছে ওই মেয়েটার ওপর যে নিজের মতো করে চমৎকারভাবে সাজিয়েছে "তাকে"। যার বেলায় আমি বারবারই ব্যর্থ! 

 চোখে সেই রগচটা ভাবটা আর নেই। চোখদুটো এখন শান্ত নদীর মতোই স্থির। অবাক লাগছে , এই চোখদুটোতে একদিন কত্তো অস্থিরতা ছিলো। ছিলো পুরো রাজ্যকে জয় করার দারুণ নেশা। এখন "তার", চোখের কোণে সংসারী স্বামীর ছাপ স্পষ্ট । প্রেমিকের সেই দস্যিপনা নেই আর! 

  "সে" ঠায় দাঁড়িয়ে। যেনো সব নড়নচড়ন ভুলে স্থির মানব। আমি কিছুক্ষণের পর্যবেক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে অবশেষে বাকশক্তি ফিরে পেলাম। সতর্ক কন্ঠে জিগ্যেস করলাম, “কেমন আছো?” "সে" আস্তে করে চোখ নামিয়ে "হ্যাঁ" সূচক মাথা নাড়ালো। তারপর আমিও উথাল-পাথাল হওয়া মনকে কিছুটা শক্ত করে বলেই ফেললাম, “আমাদের  গল্পটা হয়ত অন্য রকম  হতে পারতো।”

 তারপর আর কোনো শব্দ নেই। যেনো পৃথিবীর সমস্ত নীরবতা গ্রাস করেছে দুজনকে। হঠাৎ করোর হাতের টানে আচমকা হুশ ফেরে নিজের। তাকিয়ে দেখি, আমার "ঘর "আমার সমানে দাঁড়িয়ে। নাহ্! “তার” সামনে আর যাওয়া হয় নি। "সে" তার সঙ্গীর হাত ধরে এতোক্ষণে চলে গেছে অনেকটা দূর। হয়তো আমার সবটাই ছিলো কল্পনা! তাই তো আর তাকে কিচ্ছুটি জিগ্যেস করা হয় নি। যার জন্য,  বুকের ভেতরের উত্তরহীন সেই প্রশ্নটাকে আর মুক্তি দেওয়া হল না।
CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )