
চরণপুর ওসিপিতে খনন কাজ বন্ধ,পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ
কৌশিক মুখার্জী: বারাবনি:-
বারাবনি থানা এলাকার ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) চরণপুর ওপেন কাস্ট প্রোজেক্টে (ওসিপি) গত রবিবার থেকে খনন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় চরণপুর হাটতলা এলাকার গ্রামবাসীরা পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে এই বিক্ষোভ শুরু করেছেন। প্রশাসন এবং ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক সত্ত্বেও গ্রামবাসীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় পরিস্থিতি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার ইসিএল কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বৈঠকের আহ্বান জানালেও, গ্রামবাসীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা ছাড়া তারা কোনও আলোচনায় বসবেন না। তারা আগামী ২ মে ইসিএল কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।গত সোমবার বারাবনি ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের (বিডিও) কার্যালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে রাজ্য সরকার গ্রামবাসীদের জমির পাট্টা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে শর্মা পাড়া-কাশীডাঙা এলাকায় সরকারি জমির জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। বারাবনি ব্লক ল্যান্ড রেভিনিউ অফিসার (বিএলআরও) জানিয়েছেন, দোমহানি বাজারের কাছে এই জরিপ কাজ চলছে।
বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তারা বর্তমানে যে জমিতে বসবাস করছেন, তা ইসিএলের। তবে ইসিএল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে থাকলেও, গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তাদের কাছে এখনও কোনও নিশ্চিত আশ্বাস বা ক্ষতিপূরণের অর্থ পৌঁছায়নি। গত দু’বছর ধরে তারা এই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। খননের সময় ব্লাস্টিংয়ের কারণে এলাকায় একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
গ্রামবাসীদের মধ্যে দুটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। একটি গোষ্ঠী আশ্বাসের ভিত্তিতে খনন কাজ শুরু করতে রাজি, অন্য গোষ্ঠী তাৎক্ষণিক পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।ইসিএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো এলাকা তাদের অধীনে হলেও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় গ্রামবাসীদের জমি দেওয়া হচ্ছে এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আস্থা অর্জনের জন্য ৪৬ জনের ক্ষতিপূরণের চেকের কপিও গ্রামবাসীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামবাসীদের অযৌক্তিক জেদের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
খনন কাজ বন্ধ থাকায় ইসিএলের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
•প্রশাসনের নীরবতা ও গ্রামবাসীদের ক্ষোভ•
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসন ও ইসিএল কর্তৃপক্ষ বারবার বৈঠকের ডাক দিলেও কোনও স্থায়ী সমাধান দেওয়া হচ্ছে না। সোমবারের বৈঠকের পর খনন কাজ শুরু করার চেষ্টা করা হলেও, প্রচুর সংখ্যক মহিলা গ্রামবাসী যানবাহনের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
এই অচলাবস্থার মধ্যে গ্রামবাসীদের দাবি ও ইসিএলের অবস্থানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা চলছে। তবে আগামী ২ মে’র বিক্ষোভের ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।