
চিত্তরঞ্জনের সমবায় নির্বাচনে বামপন্থীদের অপ্রতিরোধ্য জয়, লেবার ইউনিয়নের ঐতিহাসিক শক্তি অটুট
কৌশিক মুখার্জী: চিত্তরঞ্জন:-
চিত্তরঞ্জনের সিএলডাব্লু কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি (সিসিএস) নির্বাচনে বামপন্থী সমর্থিত লেবার ইউনিয়ন (সিআইটিইউ) তাদের ঐতিহাসিক আধিপত্য বজায় রেখেছে। টানা ৭২ বছর ধরে এই সমবায় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা লেবার ইউনিয়ন এবারও ৩১টি আসনের মধ্যে ২১টিতে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, সিআরএমসি (আইএনটিইউসি সমর্থিত) প্রার্থীরা ১০টি আসনে জয়ী হয়েছেন। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে চিত্তরঞ্জনের সমবায় আন্দোলনে বামপন্থীদের দুর্ভেদ্য দুর্গ আরও মজবুত হলো।
লেবার ইউনিয়নের নেতা রাজীব গুপ্ত এই জয়কে তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “১৯৫২ সালে আমাদের পূর্বসূরীরা যে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, তার ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। এবার আমাদের লক্ষ্য এই সমবায়কে আরও আধুনিক ও গতিশীল করা।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে নির্বাচনের পথ মসৃণ ছিল না। ভোটের তারিখ নিয়ে জটিলতা, মনোনয়ন প্রত্যাহারের চাপ, এমনকি প্রার্থীদের ভয় দেখানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি ভোটের দিন ঠিক করতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। তবে, ভোটারদের সমর্থন এবং রেল প্রশাসন, পুলিশ, আরপিএফ ও নির্বাচন কর্মীদের সহযোগিতায় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রাজীব গুপ্ত এই সহযোগিতার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, সিআরএমসি নেতা ইন্দ্রজিৎ সিং পরাজয়ের কারণ হিসেবে তাদের বার্তা ভোটারদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে না পারার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “লেবার ইউনিয়নের দীর্ঘ ৭২ বছরের শাসনে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যা আমরা তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্ভবত আমরা তা কার্যকরভাবে বোঝাতে পারিনি।” তিনি সিসিএসের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে ঋণের ক্ষেত্রে গ্যারান্টারদের উপর চাপ কমাতে ঋণ বীমা চালু করা, জরুরি ঋণের সুবিধা প্রদান এবং নিয়োগে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে সিসিএসের কিছু কর্মীর আচরণ সন্তোষজনক নয়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে চান, জোর করে নিয়ন্ত্রণ নয়।
এই নির্বাচন শুধু একটি সমবায় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণের লড়াই নয়, বরং চিত্তরঞ্জনের শ্রমিক সমাজের ঐক্য ও আস্থার প্রতিফলন। লেবার ইউনিয়নের এই জয় তাদের ঐতিহাসিক শক্তি ও ভোটারদের অবিচল সমর্থনের প্রমাণ। সামনের দিনে সিসিএসের কার্যক্রম আরও উন্নত ও স্বচ্ছ হবে বলে আশা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।