
আসানসোলের রেশন কেলেঙ্কারি: বালি-কীটপতঙ্গ মেশানো আটা, লোক দেখানো তদন্তে জনগণের রোষ
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
সরকারি রেশন দোকানে বিতরণ করা আটা নয়, যেন বালি আর কীটপতঙ্গের মিশ্রণ! গরিবের মুখের খাদ্য নিয়ে চলছে নোংরা খেলা। আটার গুণগত মান নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠলেও, তদন্তের নামে শুধুই প্রহসন। অভিযোগকারীদের ক্ষোভ, এটা কোনও তদন্ত নয়—মিল মালিক, ডিলার আর কর্মকর্তাদের মিলেমিশে সাধারণ মানুষকে ঠকানোর ষড়যন্ত্র। এই নোংরা ব্যবস্থার দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না, আর গরিবের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে।
রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের গ্রিভান্স সিস্টেমে অভিযোগকারী অমরনাথ মাহাতোকে জানানো হয়েছে, তাঁর অভিযোগ ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। আসানসোলের উপ-বিভাগীয় খাদ্য ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রকের রিপোর্টে দাবি, ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা আটার নমুনা কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে ‘পাস’ করেছে। কিন্তু এই রিপোর্ট জনগণের গলায় আটকে থাকা ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। অভিযোগকারীদের সরাসরি প্রশ্ন—কেন নমুনা তাঁদের বাড়ি থেকে বা তাঁদের উপস্থিতিতে সংগ্রহ করা হল না? কেন ডিলারের হাত থেকে নমুনা নিয়ে এই প্রতারণার নাটক মঞ্চস্থ করা হল?
অমরনাথ মাহাতো ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “এটা তদন্ত নয়, জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি! মিল মালিক, ডিলার আর কর্মকর্তারা হাত মিলিয়ে গরিবের মুখের খাবার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। বালি আর কীটপতঙ্গ মেশানো এই আটা কি মানুষের খাওয়ার জিনিস? যাঁরা ল্যাবে এই আটাকে ‘পাস’ করেছেন, তাঁরা একবার এই আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে খেয়ে দেখুন। গরিবের জন্য কি এই নোংরা আটাই ভাগ্য? ল্যাব পরীক্ষা থেকে শুরু করে সবই ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা এই অন্যায় মেনে নেব না। আগামী দিনে কর্মকর্তাদের সামনে এই আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে খাওয়াব, তখন দেখব কার কত সাহস!”
গত মার্চ ২০২৫-এ সালানপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটায় বালি ও কীটপতঙ্গ মেশানোর অভিযোগে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্ত শুরু হতেই অভিযোগকারীদের প্রলোভন দেখানো, এমনকি ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু জনগণ পিছু হটেনি। তবু তদন্তের নামে ডিলারের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়, আর রিপোর্টে আটা ‘ঠিক’ বলে ঘোষণা করা হয়। এই ফলাফল কারও গলায় ধরেনি। অভিযোগকারীরা স্পষ্ট বলছেন, মিল মালিক ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নমুনা বদল করে এই প্রতারণা সাজানো হয়েছে।
ডিলাররা দাবি করছেন, তারা মিল থেকে পাওয়া প্যাকেট আটা সরাসরি সরবরাহ করেন। কিন্তু এই আটা এতটাই নিম্নমানের যে, তা দিয়ে রুটি বানানো অসম্ভব। সাধারণ মানুষ এই আটা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন, যা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অভিযোগকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, “গরিবের ভাগ্য কি এই নোংরা আটা? আমাদের কথা কেউ শুনছে না। সবাই মিলে একটা মাফিয়া গড়ে তুলেছে, যারা গরিবের মুখের খাবার লুটছে।”
এই কেলেঙ্কারি রেশন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সম্পূর্ণ অভাবকে সামনে এনেছে। অভিযোগকারীরা দাবি করছেন, সঠিক তদন্তের জন্য নমুনা গ্রাহকদের উপস্থিতিতে সংগ্রহ করতে হবে। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই প্রতারণা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগামী দিনে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে উঠবে। জনগণের ক্ষোভ আর থামানো যাচ্ছে না—এই নোংরা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁরা রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত।