কুলটিতে সিভিক পুলিশের প্রতারণার জাল: প্রশাসনের দুর্বলতায় জনগণের আস্থার সংকট

কুলটিতে সিভিক পুলিশের প্রতারণার জাল: প্রশাসনের দুর্বলতায় জনগণের আস্থার সংকট

কৌশিক মুখার্জী: কুলটি:-


আসানসোলের কুলটি ট্রাফিক গার্ডে কর্মরত এক সিভিক পুলিশের কাণ্ডে স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত সিভিক পুলিশ আনিস মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ট্রাফিক বিভাগে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক যুবক-যুবতীর কাছ থেকে টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন। জানা গেছে, তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন, কিন্তু চাকরি দেওয়ার কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে হঠাৎ গা-ঢাকা দিয়েছেন। প্রতারিত যুবক-যুবতীরা এই ঘটনায় হতবাক হয়ে কুলটি ট্রাফিক গার্ডে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেলেও, এই ঘটনা সিভিক পুলিশের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্য এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতার একটি বিষ্ময়কর চিত্র তুলে ধরেছে।
এই ঘটনা কেবল একটি প্রতারণার গল্প নয়, বরং একটি গভীর সমস্যার ইঙ্গিত। সিভিক পুলিশ, যারা সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করার কথা, তারা কীভাবে এমন নির্লজ্জভাবে প্রতারণার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন? আনিস মোহাম্মদের এই স্পর্ধা কোথা থেকে আসছে? এই প্রশ্ন এখন স্থানীয় জনগণের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সিভিক পুলিশের এমন কার্যকলাপ শুধুমাত্র প্রতারিত ব্যক্তিদের আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে না, বরং পুলিশ ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে ক্রমশ ক্ষুণ্ন করছে। চাকরির বাজারে অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে এই ধরনের প্রতারণার জালে পড়ে অনেকে তাদের শেষ সম্বল হারাচ্ছেন।
এই ঘটনা প্রশাসনের দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। সিভিক
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, তাদের কার্যকলাপের উপর পর্যাপ্ত তদারকির ঘাটতি এবং পেশাগত নৈতিকতার অভাব এই ধরনের অপকর্মকে উৎসাহিত করছে। কীভাবে একজন সিভিক পুলিশ এত সাহস পান যে, তিনি প্রকাশ্যে এমন প্রতারণার জাল বিছিয়ে মানুষের সঙ্গে ছলনা করেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং নজরদারির অভাব সামনে চলে আসে। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র কুলটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সমস্যার প্রতিফলন, যেখানে সিভিক পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
এই প্রতারণার ফলে স্থানীয় যুবক-যুবতীরা শুধু আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হননি, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নও ভেঙে গেছে। অনেকে তাদের পরিবারের শেষ সঞ্চয় বা ঋণের টাকা দিয়ে চাকরির আশায় আনিস মোহাম্মদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বদলে তারা পেয়েছেন শুধুই প্রতারণা। এই ঘটনা জনগণের মনে একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে—যে ব্যবস্থা তাদের নিরাপত্তা ও সুবিচার দেওয়ার কথা, সেই ব্যবস্থাই যদি এমন দুর্বলতার শিকার হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কার উপর ভরসা করবে? আনিস মোহাম্মদের এই কাণ্ড কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এই ধরনের ঘটনা জনগণকে বারবার অসুবিধার মুখে ঠেলে দিচ্ছে, এবং প্রশাসনের দুর্বলতা প্রতিটি ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )