
সংগ্রামের আগুনে গড়া মানবতার আলোকবর্তিকা: শ্রীকান্ত বধুকের কঠিন জীবনের গল্প
বাইজিদ মন্ডল: ডায়মন্ড হারবার:– ২৬ জানুয়ারি ১৯৮৫ সালের এক শীতার্ত সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ছাতিনশোল গ্রামের এক ছোট্ট মাটির কুড়ে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকান্ত বধুক। পিতা হরিহর বধুক এবং মাতা সুলোচনা বধুকের আশীর্বাদে দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামের মধ্যেই তার জীবনের যাত্রা শুরু।ছোটবেলায় তার পরিবারে “দিন আনতে পান্তা ফুরোত। ভাতের বদলে কখনো ভাতের ফ্যান, কখনো বা বেলের শরবত খেয়ে দিন কাটত। কিন্তু এই সমস্ত প্রতিকূলতা তাকে দমাতে পারেনি। বরং তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—জীবনে যদি কিছু করতে পারেন, তবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। ২০১৩ সালে শ্রীকান্ত বধুক নতুন উদ্যমে সমাজসেবার যাত্রা শুরু করেন। বিনা চিকিৎসায় মানুষকে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণের মাধ্যমে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবেন। আজ পর্যন্ত ৩,২০০ জনের চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে তিনি মানবতার আলো জ্বালিয়েছেন। ২০১৭ সালে হায়দ্রাবাদ থেকে একটি ১৪ বছরের মেয়েকে উদ্ধার করার পর তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তার সমাজসেবার কাজ আরো বিস্তৃত হয়। ২০১৮ সালে তিনি “এক টাকার পাঠশালা” প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে দরিদ্র শিশুরা শুধু পড়াশোনাই নয়, নাচ, গান এবং ক্যারাটের মতো প্রশিক্ষণও পায়। বর্তমানে এই পাঠশালার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪১০। তিনি সুন্দরবনের বাঘ বিধবা পরিবারদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদান শুরু করেন, যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়াও, ২০২০ সালে সোনার তরী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি সমাজসেবাকে আরও সুসংগঠিত করেন। করোনা এবং আমফান দুর্যোগের সময় তার অসামান্য কাজের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি লাভ করেন। শ্রীকান্ত বধুকের লক্ষ্য এখন ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হওয়া বন্ধ করা এবং শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা। আজ ৪০ বছর বয়সে পৌঁছে তিনি তার ৪০তম রক্তদান কর্মসূচি সম্পন্ন করেছেন। সুন্দরবনের বিধবাদের এবং এক টাকার পাঠশালার ছাত্রছাত্রীদের নতুন জামাকাপড় উপহার দিয়েছেন। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন মানবতার প্রতীক। শ্রীকান্ত বধুক শুধু একজন সমাজকর্মী নন, তিনি এমন একজন মানুষ, যার সামনে রয়েছে আরও বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন। তাঁর লক্ষ্য, ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করা,গরিব শিশুদের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যেখানে প্রতিটি অসহায় মানুষ পাবেন সুযোগ, প্রতিটি শিশু পাবে শিক্ষার আলো এবং প্রতিটি পরিবার পাবে সুখী জীবন যাপনের অধিকার।“সংগ্রাম যদি সাহস যোগায়, তবে মানবতা হৃদয়ে আশার আলো ছড়ায়। তিনি আরো বলেন আমি সেই আলো জ্বালাতে চাই প্রতিটি অসহায় দুঃস্থ মানুষের জীবনে।