
অসহায় আদিবাসী যুবতীর উপর নির্মম নির্যাতন,সালানপুরে ধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর থানা এলাকার আল্লাডি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারভুই গ্রামের কাছে এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে, যা এলাকার মানুষের মনে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ জাগিয়েছে। এক মানসিক ভাবে অসুস্থ আদিবাসী যুবতীকে নির্মম ভাবে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে।এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।যুবতীর গর্ভবতী হওয়ার পর এই জঘন্য ঘটনার বিষয়টি সামনে আসে, যা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, যুবতীর পিতার মৃত্যুর পর তার পরিবার অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছিল।গত বছর এক ঝড়ে তাদের বাড়ির ছাদ উড়ে যায়। সরকারি বা স্থানীয় কোনো সাহায্য না পাওয়ায় যুবতী,তার মা ও বোনকে এক স্থানীয় মহিলার বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিতে হয়। এই অসহায় পরিবার খোলা জায়গায় দিন কাটাচ্ছিল, যেখানে তাদের জন্য কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না।এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু মদ্যপ ব্যক্তির লোভাতুর দৃষ্টি যুবতীর উপর পড়ে। অভিযোগ,এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি যুবতীকে পাহাড়ি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তার উপর ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়,এই নির্মম কাণ্ড একাধিকবার সংঘটিত হয়, এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি যুবতীকে কিছু টাকা দিয়ে নীরব থাকতে বাধ্য করে।
এই জঘন্য ঘটনা দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও স্থানীয়দের দৃষ্টি এড়ায়নি।যুবতীর শরীরে গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর স্থানীয়রা বিষয়টি লক্ষ্য করেন। চিকিৎসা পরীক্ষার পর নির্বিঘ্নে জানা যায় যে, যুবতী গর্ভবতী। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় এক যুবক এই ঘটনার প্রতিবাদে গত ১৩ই জুন জাতীয় মহিলা কমিশনে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি ১৭ই জুন নথিভুক্ত হয়,এবং জাতীয় মহিলা কমিশন ১৯ জুন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারকে যুবতীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাৎক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়।
নির্দেশের পর গত ২৪শে জুন মহিলা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পীড়িত যুবতীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু মানসিক ভাবে অসুস্থ যুবতী ঘটনার বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি। পুলিশ পরিবারকে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেয়। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত পীড়িতা বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এই পরিবারের দুর্দশা শুধু এই ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জানা গেছে, তাদের কাছে ভোটার পরিচয়পত্র থাকলেও আধার কার্ড নেই। ফলে তারা ভোট দিতে পারলেও সরকারি ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের এই অসহায় অবস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবই যেন অপরাধীদের সুযোগ করে দিয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশন এই ঘটনাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে উল্লেখ করে পুলিশকে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের দুর্ভাগ্যের গল্প নয়, বরং সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। স্থানীয়দের মধ্যে এখন একটাই দাবি—এই অসহায় পরিবারের প্রতি সুবিচার এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। এই ঘটনা সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা অসহায়তা ও অবহেলার এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে, যা আমাদের সকলকে ভাবিয়ে তুলছে।