অলিখিত কাদম্বরীর আত্মকথা
সঙ্গীতা কর (কলকাতা)
১৮৪৮ সালের ২১শে এপ্রিল অনেকেই জানবে এ পৃথিবীতে আমার না থাকার কথা
আমি কিন্তু আগে থেকেই জানতাম আমি বেঁচে উঠবো, ঠিক সেদিন থেকেই
আমার দূরদর্শী মন বুঝেছিলো অপমান নিয়ে উপস্থিত থাকা যায় না
আমার কৃষ্ণবর্ণ গায়ের রং আর বাবার অর্থহীনতা জীবিত অবস্থায় প্রতিনিয়ত ছুঁড়ে দিয়েছে মৃত্যুর দিকে
আমাকে দেখে পরিবারের সবার অবহেলার দৃষ্টি নিক্ষেপ,
প্রতিনিয়ত আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে যখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছিলাম
বুঝেছিলাম আফিমের বড়িই একমাত্র শক্তিশালী পদক্ষেপ।
আমি জানতাম আফিমের বড়ির ক্ষমতা অনেক বেশি
যা মুহূর্তে অনুশোচনায় দগ্ধ করতে পারবে আমাকে ভালো না বাসা স্বামীর হৃদয়কে
দিনে ব্যবসা আর রাতে নটীর কক্ষে ব্যস্ত থাকা স্বামীকে মুহূর্তের জন্য হলেও এনে দিতে পারবে আমার অনাদৃত, উপবাসী খাটের পাশে।
এই আফিমের বড়ি আমার দেওরের বুকে দয়া নয় বিশালতা এনে দেবে
আমি জানতাম আমার শেষ অবলম্বন সমবয়সী দেওরটি তাঁর বিবাহিতা স্ত্রী কে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার অবসরে আমাকে ভাববে
আমাকে ঘিরে জেগে উঠবে তার কাব্য চেতনা
আমাকে ঘিরে তাঁর কাবিতা ঝরবে ‘শ্রাবণের ধারার মতো।’
আমি জানতাম
বিষক্রিয়ার আগে পর্যন্ত যাঁদের জন্য অন্দরমহলে ঠাঁই হয়নি আমার
তাঁরাই আমাকে অন্দরমহলে লুকিয়ে ফেলবে কিছু সত্য ঢাকতে
আমি জানতাম আমার লেখা শেষ চিঠিটা বাঁচিয়ে রাখার সাহস থাকবে না কারোর
তাই তো নিজেই লিখেছিলাম চিতার সাথে সে চিঠি জ্বালিয়ে দিতে।
অথচ আপনারা ভাববেন অন্য
আমার যে আত্মহত্যাকে আপনারা করুণার চোখে দেখবেন তা আসলে মৃত্যু নয়
তা এক নিঃশব্দ বিপ্লব
তা আমার অঘোষিত প্রতিবাদ
তা আমার না বলা অভিমানের অলিখিত দলিল
তা আমার না থেকেও থেকে যাওয়ার অদম্য প্রয়াস।