
নিম্নমানের রেশন,সালানপুরে গরিবের ক্ষোভ, প্রশাসনের নীরবতা
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের মাটিতে জ্বলছে ক্ষোভের আগুন। এ আগুন কোনো দাবানল নয়, বরং গরিব মানুষের হৃদয় থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের চিৎকার। রেশনের নামে অখাদ্য আটা বিতরণের বিরুদ্ধে বরাভূই গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তায় নেমেছেন। হাতে তাদের সেই আটার প্যাকেট, যা তারা বলছেন, মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে সেই আটা, আর তাদের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে তীব্র প্রশ্ন— “এই আটা আমাদের গলায় ঠুঁসে দেওয়া হচ্ছে কেন? প্রশাসন কি নিজেরা এটা খাবে?”
দীর্ঘদিন ধরে সালানপুরে রেশন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। গ্রামবাসীরা বারবার তুলে ধরেছেন নিম্নমানের রেশন সামগ্রীর সমস্যা। সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে, অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে শুধু পরীক্ষা আর কাগজে কলমে ‘ক্লিন চিট’। এই পরীক্ষার ফলাফল গরিবের পেটে আগুন জ্বালায়, তবু প্রশাসনের নীরবতা অব্যাহত। বরাভূইয়ের মানুষ আর নীরবে সহ্য করতে রাজি নয়। তারা রাস্তায় নেমে সেই আটার প্যাকেট ছুঁড়ে ফেলেছে, ছুঁড়ে ফেলেছে তাদের উপর চাপানো অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায্য ক্ষোভ।
সোমবার বরাভূই গ্রামের বাসিন্দারা সালানপুর বিডিও অফিসের সামনে জড়ো হন। হাতে অখাদ্য আটার প্যাকেট নিয়ে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস দুজন প্রতিনিধিকে অফিসে আসতে বলেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা অফিসের বাইরেই স্মারকলিপি ও আটার প্যাকেট রেখে তাদের প্রতিবাদ জানান। তাদের কণ্ঠে ছিল তীব্র কটাক্ষ— “এই আটা বিডিও সাহেবকে খাওয়ানো হোক, তবেই বোঝা যাবে এর মান কতটা!” গ্রামবাসীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে নিম্নমানের রেশন দেওয়া হলে এই আন্দোলন আরও বৃহৎ আকার নেবে।
বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস জানিয়েছেন, এই বিক্ষোভ কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের কাছে আগাম কোনো তথ্য ছিল না। তিনি বলেন, “আমরা দুজন প্রতিনিধিকে আলোচনার জন্য ডেকেছিলাম, কিন্তু তারা আসেননি।” অন্যদিকে, ফুড ডিপার্টমেন্টের সাব-ইন্সপেক্টর বিনেশ্বর রায় জানান, পূর্বের অভিযোগের ভিত্তিতে আটার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল এবং রিপোর্টে তা মানসম্মত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের প্রশ্ন, যে আটা খাওয়ার অযোগ্য, তাকে কীভাবে ক্লিন চিট দেওয়া হচ্ছে? এই পরীক্ষা কি গরিবের কষ্টকে উপেক্ষা করার একটি অজুহাত মাত্র?
রেশন ব্যবস্থা গরিবের জন্য জীবনরেখা হওয়ার কথা। কিন্তু যখন তা অখাদ্য হয়ে ওঠে, তখন তা শোষণের হাতিয়ারে পরিণত হয়। সালানপুরের এই আটা শুধু আটা নয়, এটি গরিবের উপর চাপানো অবিচারের প্রতীক। ডিলারদের গাফিলতি আর প্রশাসনের নীরবতা যেন একই সুতোয় গাঁথা। গ্রামবাসীরা প্রশ্ন তুলছেন, “আমরা গরিব বলে কি এই অপমান সহ্য করব? এই অখাদ্য আমাদের ভাগ্যে কেন?”
বরাভূইয়ের এই প্রতিবাদ শুধু একটি বিক্ষোভ নয়, এটি একটি জাগরণ। গরিব মানুষ আর চুপ থাকবে না। তারা দাবি করছে মানসম্মত রেশন, স্বচ্ছ ব্যবস্থা, আর দায়িত্বশীল প্রশাসন। রাস্তায় ছড়ানো আটার প্যাকেটগুলো শুধু আটা নয়, গরিবের অধিকারের লড়াইয়ের প্রতীক। এই ক্ষোভের আগুন যদি প্রশাসনকে না জাগায়, তবে এটি আরও তীব্র হবে, আরও বিস্তৃত হবে। সালানপুরের রাস্তা এখন শুধু বরাভূইয়ের নয়, এটি প্রতিটি শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর। প্রশাসন কি এই ক্ষোভ শুনবে, নাকি গরিবের উপর শোষণের এই খেলা চলতেই থাকবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।