
রেশনের আটা,‘পরীক্ষায় পাশ’ কিন্তু জনগনের মনে প্রশ্নের ঝড়,মিল বন্ধে কী রহস্য?
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
সালানপুর ব্লকের রেশন দোকানে যে আটা বিতরণ হচ্ছিল, তা নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ যেন আকাশ ছুঁয়েছিল।বরাকর হনুমান চড়াইয়ের অম্বিকা ফ্লাওয়ার মিল থেকে আগত এই আটা, যাকে স্থানীয়রা ‘খাওয়ার অযোগ্য’ বলে বারবার চিৎকার করে বলেছেন, তা নিয়ে জনরোষের তীব্রতা আরও বেড়েছে। অথচ, খাদ্য দপ্তরের পরীক্ষাগারে এই আটা দু’দুবার ‘মানসম্মত’ বলে সিলমোহর পেয়েছে। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। জনগণের ক্রমাগত বিক্ষোভ আর অভিযোগের মুখে অবশেষে ২৬শে জুন সেই মিলটিই বন্ধ করে দেওয়া হলো। এখন প্রশ্ন উঠছে যদি আটা সত্যিই ভালো ছিল, তবে মিল বন্ধ কেন? আর যদি জনগণের অভিযোগই সঠিক,তাহলে সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্টের ওপর ভরসা করবে কে?এই ঘটনা যেন এক রহস্যময় ধাঁধার জন্ম দিয়েছে, যার উত্তর কেউ জানে না।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ ছিল স্পষ্ট এই আটা দিয়ে রুটি বানানো যায় না, খাওয়া তো দূরের কথা। সালানপুরের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা বিডিও দপ্তরের দরজায় হাজির হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন।তাঁদের দাবি ছিল, যদি এই আটা এতই ‘উৎকৃষ্ট’, তাহলে খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা এই আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে সবার সামনে খেয়ে দেখাক। কিন্তু বিডিও বা ফুড ইন্সপেক্টর কেউই এই ‘রুটি-পরীক্ষা’ দেওয়ার সাহস দেখাননি। এর মধ্যেই খবর এলো, অম্বিকা ফ্লাওয়ার মিলকে পুরোপুরি শাটার টেনে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, জেলা খাদ্য দপ্তর মিলটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছিল। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষের দেওয়া জবাবে দপ্তরের সন্তুষ্টি মেলেনি। ফল? মিল বন্ধ। সালানপুরের বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস জানালেন, খাদ্য দপ্তর যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।খাদ্য সরবরাহ বিভাগের আধিকারিক বিনেশ্বর রায়ও নিশ্চিত করলেন, মিলটি আর চলবে না। তবে, এখন রেশন দোকানে আটা কোথা থেকে আসবে? সেই সিদ্ধান্ত নাকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে।
এদিকে, ডিলারদের মধ্যেও অসন্তোষের আগুন। এক প্রভাবশালী ডিলার নেতা নাম গোপন রেখে বললেন, “আটার গুণমান এতটাই খারাপ ছিল যে গ্রাহকদের ক্ষোভের ঝড়ে আমাদেরই প্রথম পড়তে হয়েছে।” অনেক ডিলার নাকি এই মিলের আটা নিতেই চাননি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন এতদিন এই আটা সরবরাহ চলল? কেন জনগণের অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হলো না?এই ঘটনা যেন একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। সরকারি পরীক্ষাগারে আটা বারবার ‘পাশ’ করল, তবু জনগণের কথা মানা হলো না। অথচ, এখন মিলই বন্ধ করে দেওয়া হলো। তাহলে কি জনগণের ক্ষোভই জিতল, নাকি পরীক্ষাগারের রিপোর্ট ছিল ভুল? এই রিপোর্টের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কেন কেউ মুখ খুলছে না? আর যদি আটাই খারাপ ছিল, তাহলে এতদিন কেন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা হলো? এই ‘পাশ’ করা আটার রুটি কি সত্যিই খাওয়ার যোগ্য ছিল, নাকি জনগণের ক্ষোভের কাছে হার মানতে হলো সরকারি ‘সার্টিফিকেট’কে? এখন সবার চোখ রেশন দোকানের নতুন আটার দিকে। কী আসবে এবার? আবার কোনো ‘পাশ’ করা আটা, যা জনগণের গলা দিয়ে নামবে না? নাকি এবার সত্যিই মানুষের কথার মর্যাদা দেওয়া হবে? এই ধাঁধার উত্তর মিলবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে একটা কথা স্পষ্ট রেশনের আটা নিয়ে এই নাটক যেন শেষ হয়ে শুরু হয়েছে, আর জনগনের মনে প্রশ্নের পাহাড় কেবল বাড়ছেই।