
আসানসোলের দেন্দুয়ায় ইস্পাত কারখানায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার করুণ চিত্র
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
আসানসোলের সালানপুর ব্লকের দেন্দুয়ায় অবস্থিত “মাইথন স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড” কারখানায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব এবং শিল্প কারখানার অব্যবস্থাপনার এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে। এই দুর্ঘটনায় একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, এবং অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক।মৃত শ্রমিকের নাম সঞ্জয় মণ্ডল।সূত্রের খবর অনুযায়ী, কারখানার দু’নম্বর শেড বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে। এই শেডটি কারখানার একটি ভাঁটির কাছে অবস্থিত ছিল। শেড ভেঙে পড়ার সময় কর্মরত শ্রমিকরা প্রাণভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, বিহারের বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল নামে এক শ্রমিক ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। আহত শ্রমিকদের দ্রুত আসানসোলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরা মৃতদেহ কারখানার ভিতরে রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা এই ঘটনার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন।পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে, এই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে কারখানা কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
এই ঘটনা শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাবের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।শ্রমিকদের মতে, কারখানার অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা মানের প্রতি উদাসীনতা এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। বাইরের রাজ্য থেকে আগত শ্রমিকরা, যারা এই কারখানায় কাজ করছেন, তারা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হন। এই ঘটনা পুনরায় প্রমাণ করে যে, শ্রমিকদের জীবনের মূল্যায়ন এবং তাদের নিরাপত্তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না।দুর্ঘটনার পরপরই কারখানার কর্মী ও আধিকারিকরা উদ্ধার কাজে হাত লাগান। তবে, শেডের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে সঞ্জয় মণ্ডলের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়নি। পুলিশ এখন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, নিয়মিত রক্ষণা বেক্ষণের অভাব এবং নিরাপত্তা নিরীক্ষণের ঘাটতি এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।দেন্দুয়ার এই দুর্ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা এবং অবহেলার একটি বড় চিত্র তুলে ধরে। সঞ্জয় মণ্ডলের মৃত্যু এবং অন্যান্য শ্রমিকদের আহত হওয়ার ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শিল্পের উন্নতির পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবন ও নিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে বিজেপি ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কর্মী ও নেতারা উপস্থিত হয়।এবিষয়ে বিজেপির তরফ থেকে বলা হয় তৃণমূল কংগ্রেস ও কারখানা কতৃপক্ষের যৌথ চেষ্টা ছিল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার, পুলিশ তৃণমূলের ক্যাডার হয়ে সেই কাজকে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল কিন্তু বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেস ও কতৃপক্ষের সেই উদ্যোগ কে বিপল করেছে।এবিষয়ে তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মনোজ তেওয়ারী বলেন, ঘটনায় এক শ্রমিক যিনি বিহারের বাসিন্দা, সে মারা গেছে।পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করা হবে।এবং আমার চাই তারা যেনো ক্ষতিপূরণ পাই।
বিহার থেকে কারখানায় এসে ভেঙ্গে পড়লেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
কারখানা কর্তৃপক্ষ কৌশিক চক্রবর্তী জানান দুর্ঘটনা হয়েছে।একজনের মৃত্যু হয়েছে।কয়েক জন আহত হয়েছে।ক্ষতিপূরণ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।
দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে মৃত শ্রমিকের পরিবারকে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।এদিন ব্লকের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মনোজ তেওয়ারী বলেন বারাবনি বিধায়ক তথা মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের নির্দেশ মত কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ক্ষতিপূরণ জন্য আলোচনা করা হয়।যেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ পিএফ,এস আই সহ সাড়ে ১২লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানান।