খোলা চিঠি

মৌসুমী মন্ডল (কলকাতা)

রৌদ্র……….,

এ বছরে শ্রাবনের জন্ম হয়েছে এইতো কিছুদিন হলো৷ সে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দেবে দেবে অবস্থা। উন্মাদ! কারো ধার ধারে না! ওর এমন উন্মাদ স্বভাবের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে মানুষের মন খারাপ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় একেবারেই। হুট করেই গুমোট হয়ে যাওয়া, এরপর বর্ষণ। কখনো বা বর্ষণের শেষে এক ঝলক রামধনু।
এসব কিছু নতুন করে তোমাকে মনে করানোর কিছু নেই । তুমি প্রকৃতির কাছাকাছি মানুষ। কখন কৃষ্ণচূড়া বার্ধক্য পেরিয়ে ঝরে যায়, কখন গুটি গুটি পায়ে কদম আসে, কখনই বা এলোমেলো সাদা চুল নিয়ে কাশফুল এসে হাজির হয় এসবের সবকিছুই তোমার জানা। আঙুলের ডগায়।

তুমি এত কিছু বুঝে ফেল। প্রকৃতির এই বিচিত্র সুতোর বুনোটের প্রতিটা আঁশ তোমার জানা। যুক্তি দিয়ে কাবু করে ফেলো যে কাউকে। অথচ আমার ভালোবাসার প্রকাশগুলো বোঝো না। বোঝাতে গেলেই হেসে উড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করো, “এমন করে এত ভালোবাসা কোথা থেকে শিখলে? কেনই বা বাসো!”
আমিও আমার গণ্ডির বাইরে না যেয়ে চুপ করে থাকি৷ কথার পিঠে কথা আমার মুখে মানায় না সবসময়। পায়ের নখের দিকে তাকিয়ে থাকি। কখনো বা নাকের ডগায় চোখের কার্নিশ ভেদ করা জমে থাকা জল টুপ করে পায়ের উপর পড়ে।

আমি মানুষটা আসলেই বোকা। মুখ ফুটে যা বলতে চাই বলতে পারি না। বলতে পারি না তোমাকে ভালোবাসা-বাসির কারণ। এও বলতে পারি না তোমাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি, যতটা ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্খা আমার বুকে পুষে রাখি। পাওয়ার স্বপ্ন দেখি।

নিশুতি রাতগুলোতে এসব বোকামির কথা ভাবি নিভৃতে, একান্ত নিজস্ব সময়টায়। যখন টের পাই চোখ আবারও ভিজে যাচ্ছে।
অথচ তুমি এসব কিছু জানতেই পারো না! জানলে হয়তো ব্যঙ্গ করে বলতে, “তুমি তো অত নাটুকে ছিলে না আগে!”
হয়তো ছিলাম না। হয়তো বা এমনই ছিলাম।তুমি খেয়াল করো নি, মনোযোগ দাও নি৷
বোঝো নি ঠিক সেইভাবে ,যেভাবে কবিতা বোঝো, পলিটিক্স নিয়ে কথা বলো, ভারি ভারি philosophy বুঝে যাও।
কিন্তু আফসোস ,ভালোবাসা মানুষকে যে নাটকীয় করে তোলে, কাদামাটির মতো নরম করে ফেলে এইসব কথা তুমি মানোই না কখনো।

তুমি যেমন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারো,আজ বৃষ্টি হবে, তেমন করে কি একবারও আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারো নি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি? হয়তো পারো নি। অথবা হয়তো জেনেও না জানার ভান করে গেছো।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )