
‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ – আশা ও আশঙ্কা
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী: ফাইনাল এক্সপোজার:- রাজ্যে প্রায় ৮০ হাজার বুথ আছে। এদের মধ্যে কোনো পাড়ায় হয়তো ১০০০ মিটার রাস্তার মধ্যে ১০০ মিটার রাস্তা খারাপ আছে। কোথাও বা দু'একজন অথবা তার থেকে সামান্য বেশি ব্যক্তি বয়স্ক ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এছাড়া আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলো প্রশাসনের উচ্চমহলে পৌঁছায়না। আপাতদৃষ্টিতে এগুলো ছোটখাটো বিষয় বলে মনে হলেও ভুক্তভোগীরা এর গুরুত্ব জানে। রাজ্য সরকারের আন্তরিকতা সত্ত্বেও স্থানীয় স্তরে নোংরা রাজনীতি বা অন্যান্য কারণে এইসব সুযোগ সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত থাকছে। বারবার আবেদন করেও সমস্যার সমাধান হয়না। এবার এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য সরকার নিয়ে আসতে চলেছে এক নতুন প্রকল্প 'আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান'। ২২ শে জুলাই নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের এই নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী। তার দাবি দেশের মধ্যে এই প্রথম এই ধরনের প্রকল্প হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি তিনটি বুথ পিছু একটি করে সেণ্টার গড়ে উঠবে। সেখানে উপস্থিত থেকে সরকারি আধিকারিকরা সাধারণ মানুষের নানান অভাব অভিযোগ শুনবেন ও সেগুলি সমাধানের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য সমস্ত কাজ অনলাইনে হবে। এরজন্য বুথ পিছু ১০ লক্ষ টাকা হিসাবে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আগামী ২ রা আগস্ট থেকে শুরু হবে এই কাজ এবং দু'মাসের মধ্যে শেষ হবে। এর আগে দেখা গেছে দিনের পর দিন ব্লক অফিসে ঘোরাঘুরি করে বা নেতাদের হাতেপায়ে ধরেও রাজনৈতিক কারণে সাধারণ মানুষ তাদের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু 'দুয়ারে সরকার' প্রকল্পে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। সবার আশা এই প্রকল্প হয়তো পাড়ার ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে আগামী বছরের প্রায় শুরুতেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। যেসব এলাকার মানুষের ক্ষোভ আছে এই প্রকল্প সেই এলাকার মানুষের ক্ষোভ নিরসনে সহায়ক হবে। ফলে লাভবান হতে পারে শাসকদল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য মহৎ হলেও আশঙ্কা অন্যত্র। সৌজন্যে একশ্রেণির তৃণমূল নেতার সীমাহীন দুর্নীতি। রাজ্যে তিন সহস্রাধিক পঞ্চায়েত ও শতাধিক পৌরসভা আছে। বিভিন্ন জায়গায় তোলাবাজী ও কাটমানি আদায়ে একশ্রেণির অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত প্রধান সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং পুরসভার চেয়ারম্যান সহ কাউন্সিলার ও শহর সভাপতিদের ট্রাক রেকর্ড খুবই খারাপ। বেশ কিছু ক্ষেত্রে একশ্রেণির বিধায়কের নাম সামনে এসেছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের গন্ধ পেয়ে এরা আবার যদি কাটমানি আদায় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন কিন্তু রাজ্য সরকারের মুখ পুড়বে। অনলাইনে সমস্যা চিহ্নিত হবে ঠিকই, কিন্তু কাজগুলো করবে ঠিকাদাররা। অভিযোগ, কড়াকড়ি করা সত্ত্বেও আবাস যোজনায় অনেক জায়গায় ঠিকাদারদের নাকি নির্দিষ্ট দোকান থেকে বেশি দামে মাল কিনতে বাধ্য করে ঘুরপথে কাটামানি আদায় করা হয়েছে। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয় এবং 'আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান' প্রকল্পে তার পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে, যতই বিরোধীদের অস্তিত্ব দুর্বল হোক, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে।
এখন দেখার রাজ্য সরকার এবং দল হিসাবে তৃণমূল এই আশঙ্কা দূর করতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে?