নিভৃতে থাকে যে
অদ্রিজা মুখার্জী (বর্ধমান)

হাওড়া স্টেশনের প্লাটফর্ম নং ৭, অসংখ্য মানুষের আসা যাওয়া সেখানে। তবে কেউ দেখেনা সেই প্ল্যাটফর্মের এককোণে পড়ে থাকা ১০-১১ বছর বয়সের এলোমেলো চুলের ছেলেটিকে, যার পরণে ছেঁড়া জমা ও হাতে এক পলিথিন এর ব্যাগ। যে ব্যাগে রয়েছে অসংখ্য ঠোঙা ও প্লাস্টিকের ভাঙা বোতল।
সে ছেলের বাবা-মা ছিল না। বহুদিন আগে বাস দুর্ঘটনায় তাদের হারিয়েছে। আর সেই বাবা-মা হারানোর দিন থেকেই এই রেলস্টেশনই তার আশ্রয়। তবে সে স্বপ্ন দেখে… স্বপ্নে সে দেখে অনেক বড় মানুষ হবে সে। তার নিজস্ব বাড়ি থাকবে, যখন যা ইচ্ছা হবে তাই সে খাবে। অনেক বড় হবে সে একদিন…
ছেলেটির দিনের পর দিন কেটে যায় প্রখর রোদে, বৃষ্টিতে, আবার কখনও পুলিশি তাড়ায়। প্রতিটা রাত সে ক্ষুধার্ত অবস্থায় চোখ ভরা জল নিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে কবে সে ভালো ভাবে বাঁচবে। কবে বড় হবে!
একদিন সে এক ভদ্রলোকের হারানো ব্যাগ খুঁজে দেওয়ায় সে ব্যক্তি তার উপর মুগ্ধ হয়েছিলেন। নিষ্পাপ সেই পথ শিশুকে তিনি কথা দেন যে তার লেখাপড়ার ব্যবস্থা নেবেন তিনি। খুব খুশি হয়েছিল সেই ছেলে। ভেবেছিল - এই বুঝি তার জীবন বদলাবে।
তবে না! …. সেই ভদ্রলোক আর আসেননি।
দুঃখে, কষ্টে, যন্ত্রণায় সে রেল লাইনে দিশেহারা ভাবে হাঁটতে থাকে। হাঁটাকালীন সে লক্ষ্যই করে না যে সে একেবারে লাইনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সমন্ধে কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না তার। যা হওয়ার, তাই হয়। গতিশীল ট্রেনে সে ছেলে ধাক্কা খায় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
লোকজনের ভিড় হয়, মিডিয়া আসে, পুলিশ আসে…
কারো কোনো যায় আসে না।
খবরের কাগজে শুধুমাত্র এক লাইনের নিউজ হয় ” অজ্ঞাত পরিচয়ের শিশুর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু”।
আকাশের কালো মেঘ সরে গিয়ে রোদ ওঠে। স্টেশনে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। মানুষের নিত্য কাজের জন্য যাতায়াতও হয়। শুধু সেই পথ-শিশুর ঘুম আর ভাঙে না এবং তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
এভাবেই তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়…
CATEGORIES কবিতা