হটন রোড দখলমুক্তি পুরনিগমের হঠাৎ ইউ-টার্নে হতবাক আসানসোলবাসী, অভিযান বন্ধ

কৌশিক মুখার্জী: আসানসোল:-

দুই দিন ধরে চলা তুমুল প্রস্তুতি, মেয়রের বৈঠক, পুলিশ ও পুরনিগমের আধিকারিকদের পরিদর্শন—সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছিল হটন রোডের নর্দমার উপর গড়ে ওঠা অবৈধ ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদের দিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে আচমকা পুরনিগমের ঘোষণা, দখলমুক্তি অভিযান আপাতত স্থগিত! এই সিদ্ধান্তে হতবাক শহরবাসী, দোকানদার থেকে সাধারণ মানুষ—সবাই প্রশ্ন তুলছেন, কেন এই ইউ-টার্ন?
•অভিযান বন্ধ: কী ঘটল পর্দার পেছনে?•
দুই দিন ধরে আসানসোল পুরনিগমের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, হটন রোডের পরিদর্শন এবং পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে একটি বড় ধরনের দখলমুক্তি অভিযানের পরিকল্পনা চলছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করেছিলেন, এবার হয়তো রাস্তার জ্যাম আর ফুটপাতের অবৈধ দখল থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে পুরনিগমের তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিস ছাড়াই জানানো হল, অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক চাপ থাকতে পারে। তবে পুরনিগমের তরফে এখনও কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
•দোকানদারদের প্রতিক্রিয়া: স্বস্তির নিঃশ্বাস, তবু আশঙ্কা•
হটন রোডের ফুটপাতে দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা অনেকের জন্য এই সিদ্ধান্ত স্বস্তির। এক দোকানদার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন,
“আমার সংসার চলে এই দোকানের আয়ে। পুরনিগম যখন দোকান ভাঙার কথা বলল, আমি নিজেই তাড়াহুড়ো করে দোকান তুলে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন অভিযান বন্ধের খবরে স্বস্তি হলেও মনে ভয় রয়ে গেছে—আবার কবে এই সিদ্ধান্ত বদলাবে?”
অন্যদিকে, স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা কটাক্ষের সুরে বলেন, “ভোটের মুখে এমন সিদ্ধান্তে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজনীতির খেলায় আমরা দোকানদাররা পিষে যাই। তবে আমরা চাই, সবকিছু বৈধভাবে সমাধান হোক।”
•কেন এই সিদ্ধান্ত?• বিশ্লেষণের আলোয়
পুরনিগমের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উঠে আসছে:
•রাজনৈতিক চাপ: আসন্ন নির্বাচনের আগে দোকানদারদের বিক্ষোভের ভয়ে পুরনিগম পিছু হটতে পারে। হটন রোডের দোকানদাররা একটি বড় ভোটব্যাঙ্ক, এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জনমতের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
•প্রশাসনিক অসঙ্গতি: পুরনিগমের পরিকল্পনায় হয়তো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা সমন্বয়ের অভাব ছিল। অভিযান শুরুর আগেই দোকানদারদের পুনর্বাসনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না, যা বড় ধরনের অশান্তির কারণ হতে পারত।
•জনমতের ভয়: শহরের একাংশের বাসিন্দারা অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে থাকলেও, দোকানদারদের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে পুরনিগম হয়তো মধ্যমপন্থা বেছে নিয়েছে।
•শহরবাসীর প্রশ্ন: এরপর কী?•
হটন রোডের দখলমুক্তি নিয়ে পুরনিগমের এই ‘এক পা এগিয়ে, দুই পা পিছিয়ে’ নীতিতে শহরবাসী বিভ্রান্ত। একদিকে, রাস্তার জ্যাম আর ফুটপাতের অবৈধ দখল থেকে মুক্তির আশা ছিল, অন্যদিকে দোকানদারদের জীবিকার প্রশ্নও উঠছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “পুরনিগম যদি শুধু ঘোষণা দিয়ে পিছিয়ে যায়, তাহলে শহরের উন্নয়ন হবে কীভাবে? আমরা চাই সুষ্ঠু সমাধান, শুধু রাজনীতি নয়।”
•একটু কটাক্ষ: রাজনীতির চোরাস্রোতে ভেসে গেল অভিযান?•
হটন রোডের দখলমুক্তি অভিযান যেন রাজনীতির দাবার ছকের একটি গুটি। ভোটের মুখে পুরনিগমের এই ‘নরম’ সিদ্ধান্ত কি শুধুই সময় কেনার কৌশল? নাকি সত্যিই দোকানদারদের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে? শহরবাসী অপেক্ষায়—পুরনিগমের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? তবে একটা কথা স্পষ্ট, আসানসোলের রাস্তায় এখনও ‘দখল’ আর ‘মুক্তি’র খেলা চলছে!
•সম্পাদকীয় মন্তব্য•: পুরনিগমের এই সিদ্ধান্ত কতটা জনকল্যাণমূলক, আর কতটা রাজনৈতিক, তা সময়ই বলবে। তবে শহরের উন্নয়ন ও দোকানদারদের জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এখন পুরনিগমের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )