চরণপুর ওসিপিতে অবৈধ খননে ভূ-ধস,দুই প্রাণের হানি, ইসিএলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে

চরণপুর ওসিপিতে অবৈধ খননে ভূ-ধস,দুই প্রাণের হানি, ইসিএলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে

কৌশিক মুখার্জী: বারাবনি:-

পশ্চিম বর্ধমানের চরণপুর ওসিপি (ওপেন কাস্ট প্রোজেক্ট)-তে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অবৈধ কয়লা খননের সময় ভূ-ধসের কবলে পড়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিচয় হলো চরণপুর মেজিয়াবেড় নিবাসী গৌরব বাউরি (৪৩) এবং কাশিডাঙা উপর পাড়ার সাধন বাউরি (৩০)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য কয়লা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ভূ-ধসের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, এবং পুলিশ মৃতদেহ দুটি পোস্টমর্টেমের জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।মৃত সাধন বাউরির পিতা অনিল বাউরি জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে ও ছেলের স্ত্রী রাত ১১টার দিকে কয়লা আনতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলে নিয়মিত এই কাজ করত না। বাড়িতে কয়লার অভাব হলে মাঝেমধ্যে যেত। কিন্তু এবার এমন বিপর্যয় ঘটে গেল।” তাঁর কণ্ঠে শোক আর ক্ষোভের মিশ্র প্রতিধ্বনি। এই দুর্ঘটনায় দুটি পরিবারের জীবন যেন এক নিমেষে অন্ধকারে ডুবে গেছে।এই ঘটনা শুধু দুটি প্রাণের হানির গল্প নয়, বরং ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। চরণপুর ওসিপির মতো সুরক্ষিত খনন এলাকায় কীভাবে অবৈধ কয়লা খননের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে, তা নিয়ে স্থানীয়দের মনে প্রশ্নের ঝড়। ইসিএলের নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতা কি কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ? স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অবৈধ খনন দীর্ঘদিন ধরে চললেও কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এমনকী, কেউ কেউ মনে করেন, এর পিছনে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকতে পারে।
চরণপুরে এটি প্রথম ঘটনা নয়। অতীতেও অবৈধ খননের ফলে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু প্রতিবারই তদন্তের নামে খানাপূর্তি আর প্রতিশ্রুতির ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, গরিব মানুষের জীবনের মূল্য যেন এখানে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ইসিএলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যদি সত্যিই কার্যকর হতো, তাহলে এমন দুর্ঘটনা কি বারবার ঘটত? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে—ইসিএল, প্রশাসন, নাকি এই অবৈধ খননের পৃষ্ঠপোষকরা?এই ঘটনা কেবল দুটি পরিবারের শোকের গল্প নয়, বরং একটি বৃহত্তর ব্যবস্থার ব্যর্থতার চিত্র। অবৈধ খননের মতো বিপজ্জনক কার্যকলাপ যদি ইসিএলের মতো সংস্থার নাকের ডগায় চলতে পারে, তবে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, স্থানীয়দের আশঙ্কা, এটিও আরেকটি ‘ফাইলবন্দি’ তদন্ত হয়ে থেমে যাবে। ইসিএলের কাছে জনগণের প্রশ্ন—এই দুর্ঘটনার দায় কি কেবল দুই মৃত ব্যক্তির, নাকি এর পিছনে তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলার বড় ভূমিকা রয়েছে?চরণপুরের এই দুর্ঘটনা আমাদের সামনে একটি কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরেছে—নিরাপত্তার নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও, কেন গরিব মানুষের জীবন এত সস্তা? ইসিএলের উচিত এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে অবৈধ খননের মূল কারণ উদঘাটন করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। নইলে, এই শোকের ছায়া কেবল দুটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের উপর পড়বে। এই ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি জাগরণের আহ্বান—যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও গৌরব বা সাধনকে এভাবে হারাতে না হয়।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )