সিলিকোসিসের ছায়ায় সালানপুর: পাথর ক্রাশারের মৃত্যু ফাঁদ কবে থামবে?

সিলিকোসিসের ছায়ায় সালানপুর: পাথর ক্রাশারের মৃত্যু ফাঁদ কবে থামবে?

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

সালানপুর ব্লকে সিলিকোসিসের মতো মারণ রোগের নতুন একটি কেস শনাক্ত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফুলবেড়িয়ার পাতাল গ্রামের ৫১ বছর বয়সী সোরেন বাউরির সিলিকোসিস শনাক্ত হওয়ার খবরে স্থানীয়দের মনে ভয়ের কালো ছায়া পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন সোরেন, যিনি মধাই চকের একটি পাথর ক্রাশারে গত ১০ বছর ধরে মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। অসুস্থতার কারণে কাজ ছেড়ে এখন তিনি বাড়িতে বসে সিলিকোসিসের বিরুদ্ধে প্রতিদিন লড়াই চালাচ্ছেন।এলাকায় পাথর ক্রাশার ও সিরামিক কারখানায় কাজ করা বহু শ্রমিক ইতিমধ্যেই সিলিকোসিসের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে ব্লকে চারজন জীবিত সিলিকোসিস রোগী রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বারভুই এলাকার। এর মধ্যে সিলিকোসিস কার্ডধারী মণিলাল হেমব্রাম কয়েক মাস আগে এই রোগের কাছে হেরে চিরনিদ্রায় চলে গেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছর বারভুইয়ে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মৃত্যুর কারণ তদন্ত হয়নি। অনেকে মনে করেন, এই মৃত্যুগুলো সিলিকোসিসের কারণেই হয়েছে, কারণ শ্রমিকরা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এই মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে? সালানপুরের প্রতিটি মানুষের মনে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকায় বৈধ-অবৈধ পাথর ক্রাশার ও সিরামিক কারখানা বেপরোয়াভাবে চলছে, যেখানে শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন করে কাজ করানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় শ্রমিকদের বদলে বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে শ্রমিক এনে কাজ করানো হচ্ছে, যাতে অসুস্থ হলে তারা নিজ এলাকায় ফিরে যায় এবং বিষয়টি চাপা পড়ে। শ্রমিকদের জীবন নিয়ে এই খেলা কতদিন চলবে? দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, শ্রম দপ্তর, কারখানা পরিদর্শক, স্থানীয় পুলিশ, ব্লক ও জেলা প্রশাসন কি এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে না? শ্রমিকদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? সালানপুরের মানুষ এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। সিলিকোসিসের এই মহামারী রুখতে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন। অবৈধ ক্রাশার বন্ধ করা, কারখানায় সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং শ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। নইলে, সোরেন বাউরির মতো আরও অনেক শ্রমিক সিলিকোসিসের কাছে জীবন হারাবেন, আর প্রশাসনের নীরবতা এই মৃত্যুখেলাকে আরও উৎসাহিত করবে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )