অনুতপ্ত

মায়া সাহা (কলকাতা)

কৃষ্ণবর্ণা শ্রীময়ীকে দেখতে এসেছিল আভিজাত্য পরিবারের পাত্র রঞ্জু ।

রঞ্জু একটা বিখ্যাত সিগারেট কোম্পানিতে সুপারভাইজার পোস্টে চাকরি করে। দেখতে সুদর্শন, লম্বাচওড়া এবং খুব স্মার্ট। দেখলেই মনে হবে আভিজাত্য পরিবারের আদুরে ছেলে।
অপরপক্ষে শ্রীময়ী একটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে হেড টিচার হিসাবে চাকরি করে। তবে তখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। দেখতে অপ্সরা নয় বটে তবে আলগাশ্রী আছে। যথেষ্ট ব্যক্তিত্বময়ী,লম্বা চওড়ায় রঞ্জুর সাথে বেশ মানানসই হবে। দোষের মধ্যে ওর গায়ের রঙটা ফর্সা নয় , তবে কুচকুচে কালো নয়।
পাত্রপক্ষের চাহিদা ছিল পাত্রীকে দেখতে মোটামুটি সুন্দরী হলেই হবে, তবে শিক্ষিত এবং স্মার্ট হতেই হবে। চাকরি করলে আরও ভালো। কারণ চাকরি করা মেয়েরা বেশ স্মার্ট হয়। পাত্রীর স্যালারি নিয়ে ওদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

সপ্তাহখানেক আগে রঞ্জুর মা কাকিমা আর জামাইবাবুও শ্রীময়ীকে দেখতে এসেছিল। বোঝা গেছে,শ্রীময়ীকে দেখে ওদের বেশ পছন্দ হয়েছে।
জামাইবাবু তো পাত্রী পক্ষকে সাথে সাথেই ফোন নম্বর দিয়ে গেল যোগাযোগ করার জন্য।

এর একসপ্তাহ পর পাত্র রঞ্জু, ওর কয়েকজন বন্ধু, একমাত্র দাদা এবং জামাইবাবুকে নিয়ে শ্রীময়ীকে দেখতে এসেছে। পাত্রপক্ষের সাথে পাত্রীপক্ষ কিছুক্ষণ আলাপচারিতা ও মিষ্টিমুখ করানোর পর, পাত্রের সামনে পাত্রীকে আনা হলো। রঞ্জু বেশ হাসিখুশি।
ওদের মধ্যে কেউ শ্রীময়ীকে বিরক্তিকর প্রশ্ন করেনি, বরং দাদা বলেছে,
” সকালে বাবার বিছানাটা তোলা আর সকলের চা টা বানানো ছাড়া, আমাদের বাড়ির বউমাকে তেমন কোনো কাজ করতে হবে না।”
সেদিন ওদের পরিবারের সকলের আবভাবে মনে হয়েছিল,পাত্রীকে ওদের বেশ পছন্দ হয়েছে, কিন্তু ওরা যাওয়া থেকে পনেরোদিন হয়ে গেল, পাত্রপক্ষের তরফে কোনো খবর নেই। পাত্রীপক্ষ বেশ উতলা ।
অবশেষে ঘটক মারফৎ জানতে পারে, পরিবারের প্রত্যেকের পাত্রীকে পছন্দ হয়েছ। পাত্রেরও নাকি পাত্রী পছন্দ হয়েছিল কিন্তু ওর বন্ধুরা নাকি ব্যাগড়া দিয়েছে। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ও বলেছে “দর্শনধারী” বলে তো একটা কথা আছে। এই পাত্রী ওর জন্য উপযুক্ত নয়। সেদিন কথাটা শ্রীময়ীর কানে আসতে ওর মনে ভীষণ ধাক্কা লেগেছে।

বতর্মানে শ্রীময়ী শহরের একটা নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রিন্সিপাল। আর রঞ্জু ভাগ্যের দোষে সিগারেট কোম্পানির চাকরি খুইয়ে, শ্রীময়ীর স্কুলে গার্ডের চাকরি করছে।
আসলে, চাকরি খোওয়ানোর পর, ওর সুন্দরী স্ত্রী ওকে ছেড়ে ওরই বন্ধুর হাত ধরে চলে যায়। মেয়েটাকে পযর্ন্ত ওর কাছে রেখে যায়। বতর্মানে ওর মেয়ে শ্রীময়ীর দয়ায়, শ্রীময়ীর স্কুলেই পড়াশোনা করছে।
যদিও রঞ্জুর চাকরির ইন্টারভিউর সময়, শ্রীময়ী এবং রঞ্জু ওরা একে অপরকে দেখে চিনতে পেরেছে,কিন্তু তাতে কী? রঞ্জু এখন শ্রীময়ীর করুণার পাত্র ছাড়া আর কিছু নয়। সেদিনের সিদ্ধান্তের জন্য রঞ্জুও আজ বড্ড অনুতপ্ত।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )