শ্রাবণে ফাগুন

সুজান মিঠি (জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান)

আমায় নিয়ে একটা গান লিখবে বাউল?
তোমার একতারার তারে বাঁধবে আমার সুর?
শুরুটা তবে কোরো বাউল সেই সে শ্রাবণ রাত,
ঝমঝম বৃষ্টি যখন আঁতুরঘরের মেঝেয়,
ধাইমা বলে,আর একটু চাপ দাও মা, আর একটু!
বৃষ্টি ভিজে হাত দুখানা নাড়ি কেটে বলেছিল,
এই নাও মা, রাজকন্যে। এত বাদল দিনে এল যখন
নাম রেখো বর্ষা।
ও বাউল, জানো! আমার নাম বর্ষা হলো।
টাটকা গরুর দুধে, ঠাকুরদার লাঠি ছুঁয়ে ঠাকুরমায়ের
দুয়ার জোড়া গল্প নিয়ে আমি ছুট ছুটলাম।
ফুল কুড়োলাম, মালা গাঁথলাম।
তারপর গ্রামের স্কুলে সবাই আমায় দিদিমণি
করে দিল একদিন।
শাড়ির ভাঁজে নতুন বইয়ের গন্ধ নিয়ে আমি যখন
খুব হাঁটছি গ্রামের রাঙা ধুলোয় ,
ঠিক তখনই
আবার বর্ষা এলো একটা শ্রাবণ মাসে।
সেবার কী প্রবল বৃষ্টি। ভরপুর নদী, পথ ঘাট জমি
সব ভর্তি জল।
টুবটুবে ভয় মনে প্রাণে।
মাইকে ঘোষণা করলো সরকার, সাবধান সাবধান!
ঠাকুরদা বললো, দামি জিনিস সব বেঁধে নাও
আর শুকনো চিঁড়ে রাখো খানিক।
ভরা শ্রাবণ নদী ভোর রাতে কদম ফুল ঝিরঝিরে খুশি
আর শুকনো চিঁড়ে শুদ্ধু
ভাসিয়ে নিয়ে গেল গোটা গ্রাম!
ঠাকুরদার লাঠি ঠাকুরমার গল্প মায়ের ঘামআঁচল বাবার চাষের মাটি মাঠ গরু ছাগল বনমালী রতন কাকা বুল্টি স্কুল
সব কিছু ভেসে গেল, জানো বাউল!
সব কিছু ভেসে গেল।
আমিও ডুবতে ডুবতে যখন এগিয়ে চলেছি মৃত্যুর দিকে,
ঠিক তখন একটা পুরুষ হাত আমার হাত ধরে বললো,
ভয় নেই দিদিমণি, আমি হরিপদ হেমব্রম।
এসো আমার পিঠে। দেখি বাঁচা যায় কিনা।
সারাদিন সারারাত হরির পিঠে বুকে নিঃশ্বাসে
আমি ভেসে রইলাম।
গাছের ডালে আটকে রইলাম দুদিন।
আমার বিষাদ মনখারাপ কান্না শুষে নিল
সব হারানো হরি তার লোমশ ঠান্ডা বুকে।

ও বাউল, জানো! দুটো গ্রাম শেষ হয়ে গিয়েছিল সেবছর
বন্যায়।
আমার হরি আমাকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছে আজও।
কুঁড়ে ঘরের ভিতরে আমাকে রানী বলে ডাকে।
ও বাউল, পোয়াতি হয়েছে বর্ষা জানো!
ধাইমা এসে বলবে আবার, এত বাদলায় জন্ম যখন
নামটা রেখো শ্রাবণ মাস!
কিন্তু শ্রাবণে যে বর্ষার বড় ভয়!
ও বাউল, তোমার সুরে শ্রাবণ গেঁথে আমায় একটা
বসন্ত দিয়ে যাবে গো?
ধাইমা বলবে, ও মেয়ে তোর রাজকন্যের নাম রাখিস
ফাগুন।
ও বাউল এই বর্ষায় একটা ফাগুন শোনাও না গো?

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )