সালানপুরে সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস: কবে থামবে এই অন্যায়?

সালানপুরে সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস: কবে থামবে এই অন্যায়?

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের আছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। পানুরিয়া রোডের পাশে শান্ত গ্রামীণ পরিবেশের মাঝে লুকিয়ে আছে এক মারাত্মক কাণ্ড। সরকারি টাকায় তৈরি একটি পুরোনো কালভার্ট ও নালা হঠাৎ উধাও! এর পেছনে রয়েছে ‘রুদ্রা রেসিডেন্সি’ নামে একটি সংস্থা। জমি বিক্রির লোভে তারা সরকারি সম্পত্তি ভেঙে ফেলছে, আর আইন-কানুন যেন তাদের কাছে নিছক কাগজের টুকরো। আছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নীরবতা দেখে মনে হয়, তারা যেন চোখ বুজে এই অন্যায় মেনে নিয়েছে। এই ঘটনা শুধু আছড়ার নয়, গোটা সালানপুর ব্লকের এক গভীর সমস্যার চিত্র তুলে ধরছে।পানুরিয়া রোডের কৃষ্ণমোহন ম্যারেজ হলের পাশে ছিল এই কালভার্ট। বর্ষার জল সরিয়ে গ্রামবাসীদের জীবন বাঁচানোর একমাত্র ভরসা ছিল এটি। এই কালভার্ট ছিল সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি। কিন্তু এখন সেটি আর নেই। জলের পথ বন্ধ হয়ে পানুরিয়া রোড জলমগ্ন। পথচারীরা হাঁটতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, গ্রামের শান্তি ভেঙে দুর্ভোগের সুর বাজছে। দিনের আলোয়, গ্রামবাসীদের চোখের সামনে এই ধ্বংস চলছে, তবু কেউ মুখ খুলছে না। কেন? কারও পকেটে কি কিছু ‘উপহার’ ঢুকছে? নাকি পঞ্চায়েতের কিছু লোক টাকার লোভে মুখ বন্ধ রেখেছে?
রুদ্রা রেসিডেন্সি বলতে পারে, “আমরা টাকা দিয়ে জমি কিনেছি, অন্যের জল কেন নেব?” কথাটা শুনতে ঠিক মনে হলেও প্রশ্ন উঠছে। রাস্তার পাশে সরকারি কালভার্ট, তারপর PWD-র জমি, তারপরই তাদের জমি। নিজের জমিতে দেওয়াল না তুলে সরকারি কালভার্টে হাত দেওয়ার সাহস এল কীভাবে? কোনো অনুমতি নেওয়া হয়েছে? না হলে, এই ধ্বংসে বাধা দেওয়া হচ্ছে না কেন? এই কালভার্ট ছিল PWD-র জমিতে। তাহলে ভাঙার অনুমতি কে দিল? পঞ্চায়েতের নীরবতা দেখে মনে হয়, তারা যেন টাকার লোভে ‘চুপ থাকো’ নামে এক শপথ নিয়েছে। জল জমে রাস্তা অচল হয়ে পড়ছে। এই ‘উন্নয়ন’ কি শুধু কিছু লোকের পকেট ভরার জন্য? নাকি এটাই সালানপুরের নতুন ‘উন্নয়নের ধাঁচ’?এই কাণ্ড শুধু আছড়ার নয়, গোটা সালানপুর ব্লকের এক মারাত্মক সমস্যা। পুকুর, নালা ভরাট করে জমি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা কামানো হচ্ছে। গ্রামবাসীদের কষ্টের কথা কেউ ভাবছে না। কালভার্ট ভাঙার পর নতুন করে তৈরির নামে ঠিকাদারদের পকেট ভরছে। এই লুটপাট কবে থামবে? নাকি সরকারি টাকা আর মানুষের কষ্ট নিয়ে একটা বড় ধান্দা চলছে? পঞ্চায়েতের কিছু লোক যেন এই খেলায় ‘নীরব সঙ্গী’ হয়ে বসে আছে।

এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে: সরকারি সম্পত্তি ভাঙার অনুমতি কে দিল? কোনো অনুমতি না থাকলে কেন বাধা দেওয়া হল না?
নিজের জমিতে দেওয়াল না তুলে কালভার্ট ভাঙা হল কীভাবে?
পঞ্চায়েত কেন চুপ? কারও পকেট কি টাকায় ভরছে?
জল জমার সমস্যায় নতুন কালভার্ট বানিয়ে কি আবার ঠিকাদারদের লাভ দেওয়া হবে?
এই ধ্বংসের শাস্তি কি শুধু কাগজেই থাকবে?
গ্রামবাসীদের কষ্টের দায় কে নেবে?

রুদ্রা রেসিডেন্সির জমি বিক্রির ব্যবসা তাদের নিজস্ব হতে পারে। কিন্তু সরকারি সম্পত্তিতে হাত দেওয়ার অধিকার তাদের কে দিল? গ্রামবাসীদের দুর্ভোগের কথা কি একবারও মাথায় এল না? PWD-র জমিতে থাকা কালভার্ট ভাঙার আগে কার সঙ্গে ‘সেটিং’ হল? জমির সীমানা দেওয়াল না তুলে কীভাবে কালভার্ট বুজিয়ে দেওয়া গেল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কে দেবে? নাকি সবাই মিলে ‘চুপচাপ’ খেলায় মেতে থাকবে?এই ধ্বংস শুধু একটি কালভার্টের গল্প নয়, এটি গোটা সালানপুরের সরকারি সম্পত্তির লুটপাটের চিত্র। জমি বিক্রির নামে গ্রামবাসীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা না ভেবে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হচ্ছে। এই কাণ্ডে পঞ্চায়েতের নীরবতা আরও সন্দেহ বাড়াচ্ছে। তারা কি সত্যিই টাকার লোভে মুখ বন্ধ রেখেছে? নাকি এটাই এখন সালানপুরের ‘উন্নয়নের মডেল’?গ্রামবাসীরা চিৎকার করে বলছেন, এই ঘটনার তদন্ত হোক, দোষীদের শাস্তি হোক। কিন্তু প্রশাসন কি তাদের কথা শুনবে? নাকি এই ধ্বংসের খেলা চলতেই থাকবে? সরকারি সম্পত্তি বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ দরকার। পঞ্চায়েতের জড়িতদের মুখোশ খুলতে হবে। নইলে, গ্রামবাসীদের কষ্ট আর ট্যাক্সের টাকা শুধু লুটের মাল হয়ে যাবে। পানুরিয়া রোডের শান্তি এখন জলের তলায়। প্রশাসন কি এই জল থেকে শান্তি তুলে আনবে, নাকি জমি বিক্রির এই ধান্দা চলতেই থাকবে?

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )