পশুপ্রেমী আমির সেখ – এলাকার গর্ব

পশুপ্রেমী আমির সেখ – এলাকার গর্ব

সাহেব পাল, মঙ্গলকোট, পূর্ব বর্ধমান -: 

         ওরা পথ কুকুর – পথই ওদের জীবন, পথেই ওদের মরণ। দু’বেলা খাবার জোটেনা। চিকিৎসা তো দূরের কথা, সামান্য খাবারের জন্য কপালে জোটে গৃহস্থের লাঠিঝাঁটা। মাঝে মাঝে গরম ফ্যান ছুড়ে দেওয়া হয় ওদের শরীর লক্ষ্য করে। হোটেলের অথবা মিডডে মিলের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে বড় অবহেলায় ওদের দিন কাটে। তবুও পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন ওদের জন্য যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন ভাতারের মুরাতিপুরের বাসিন্দা আমির সেখ, পশুপ্রেমী থেকেই তিনি আজ হয়ে উঠেছেন ‘বিনা পয়সা’র পশু চিকিৎসক। 

       প্রতিদিন খুব খুব ভোরে উঠে আমির চলে যান মাছের আড়তে। সেখানেই তিনি কাজ করেন। যা আয় হয় তাতেই কোনোমতে তার সংসার চলে। কাজের শেষে প্রিয় বাইকটি সঙ্গে নিয়ে গলায় একটি সচেতনতামূলক বার্তা লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে অসুস্থ অথবা আহত কুকুরের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন পথে পথে। সঙ্গে অবশ্য একটি সাউন্ড বক্স ও কিছু চিকিৎসা সামগ্রীও থাকে। লক্ষ্য অসুস্থ কুকুরটিকে সুস্থ করে তোলা। এইভাবেই প্রায় গত ২০ বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে কুকুরের সেবা করে চলেছেন পশুপ্রেমী আমির। যদিও তিনি কোনো পশু চিকিৎসক নন। অবলা পশুর প্রতি তার ‘প্রেম’ দেখে জনৈক সহৃদয় পশু চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক পাঠটুকু শিখিয়েছেন।

এতেই অনেক অবলা প্রাণীর প্রাণ রক্ষা পাচ্ছে। সমস্যা হলে প্রাণীটিকে নিয়ে ছুটে যান স্থানীয় পশু  হাসপাতালে। 

          শুধু নিজের এলাকায় নয়, অসুস্থ বা আহত  কুকুরের সেবার জন্য নানান জায়গা থেকেও ডাক পড়ে পশুপ্রেমী আমিরের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে পৌঁছে যান। সংসারে শত অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজের সাধ্যমত অসহায় মানুষদের হাতে খাবার ও বস্ত্র তুলে দেন। অনেকেই সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দেন। হাসিমুখে থাকাটা আমিরের সবচেয়ে বড় রেসিপি। বাড়তি পাওনা পরিবারের সদস্যদের অকুণ্ঠ উৎসাহ। 

       ছোটমেয়ে তানিশা, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে কুকুরের সেবা করতে বেরিয়ে পড়ে। মেয়ের জন্য গর্ব হয় আমিরের। ভবিষ্যতে তার অবর্তমানে অন্তত একজন ওইসব অবলা প্রাণীগুলির যত্ন নেবে- এটা ভেবেই খুশিতে তার মন ভরে যায়। 

         সাধারণ মানুষের কাছে আমিরের আবেদন – ওরা নির্বাক, অবলা। নিজেদের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেনা। দয়া করে ওদের আঘাত করবেননা। পরিবর্তে ওদের একটু খাবার দিন। দেখবেন আপনার বিপদে ওরাই প্রথমে এগিয়ে আসবে বন্ধুর মতো।

       কথা বলতে বলতে বাইক চালু করেন আমির। তানিশাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে পাশের গ্রামে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )