বাংলা কাব্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চলেছে দ্বিভাষিক ‘ভাইরাস’

বাংলা কাব্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চলেছে দ্বিভাষিক ‘ভাইরাস’

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:-

       বই লেখা কোনো সহজ কাজ নয়। সেটা এপিস্টোলারি অর্থাৎ পত্র-সংক্রান্ত হলে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। লেখার সময় শব্দ নির্বাচনের বিষয়ে যেমন সতর্ক থাকতে হয় তেমনি পত্রে ব্যবহৃত চরিত্রগুলির গঠন সম্পর্কে গভীর ধারণা, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। নাহলে কাব্যপ্রেমী পাঠক রসাস্বাদন করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। সেই কারণে ‘লাভ-লেটার্স বিটুইন আ নোবেলম্যান অ্যান্ড হিজ সিস্টার’ পাঠক সমাজে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বাংলা ভাষায় পত্রোপন্যাস খুব একটা বেশি লেখা হয়নি। তবে যেটুকু লেখা হয়েছে তার অধিকাংশ জনপ্রিয় হয়েছে। 

         বন্ধ খামের মধ্যে অন্যের লেখা চিঠি বা প্রেমপত্র পড়ার কৌতূহল প্রতিটি মানুষের আছে। চিঠিটা কোনো মহিলার লেখা হলে সেই কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। স্বাভাবিক ভদ্রতাবোধে কেউ কেউ হয়তো সেটা প্রকাশ করেননা। মানুষের এই সহজাত কৌতূহল পত্রোপন্যাসগুলিকে জনপ্রিয় করে তোলে। এখানে ‘উত্তম’ পুরুষে ঘটনা প্রকাশিত হয় বলে কাহিনীর নায়ক-নায়িকার একান্ত সংলাপ পাঠকের মনে দাগ কাটে এবং স্রষ্টার ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠেন। পাঠক স্বয়ং হয়ে ওঠেন উপন্যাসের যাত্রাপথিক।

       নিজের প্রিয় পাঠকের জন্যেই এবার সেই দুঃসাহসিক কাজটাই করলেন কবি টুম্পা পাল।  ২০ টি ভিন্ন স্বাদের কবিতার সমন্বয়ে লিখে ফেললেন এপিস্টোলারি ‘ভাইরাস’। সেটি ইংরেজি ভাষায় ভাবানুবাদ করলেন কবি শঙ্কর সরকার।

        হিমালয়ের শীর্ষ থেকে নেমে এসে প্রেমিকার  ‘… উন্নত বুকের লোহিত ছোঁয়ায়’ কবি ‘ঝরনা হয়ে’ নামার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তারপর রহস্যময়  সমতল এলাকায় কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে কবি নারীর ‘রহস্যঘন প্রকৃতির রূপময়’ নিম্ন উপত্যকায় প্রবেশ করতে চেয়েছেন! কারণ সেখানে ‘হারিয়ে যেতে নেইকো মানা।’ ‘টেরাকোটার স্থাপত্যের’ মত কবি প্রেমিকার শরীরে খোদাই করেছেন ‘প্রেমের অমর কাহিনী’। এখানে এসেই পাঠক কল্পনার জাল বোনার সুযোগ পান। সেটা আরও বেড়ে যায় যখন ‘চিরষোড়শী’ প্রেমিকা নিজের বুকে ‘হাজার স্বপ্নের বাতি’ জ্বেলে রাখতে চান। কী সেই স্বপ্ন – আবার ভাবনায় পড়ে যান পাঠক! 

        কিন্তু ভাবনা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না। কারণ ‘অদূর সৃষ্টির নতুন সম্ভাবনার বৃষ্টি ঝরে দু’চোখে’। কী সেই নতুন সৃষ্টি – চিন্তিত হয়ে ওঠেন পাঠক। ‘ঠোঁটের স্পর্শে’ যখন ‘শীৎকারের বিষ্ফোরণ’ ঘটে তখনই ‘নীল খামে বন্দী মুহুর্ত’ পাঠককে অন্য জগতে পৌঁছে দেয়। আসলে ‘শীৎকার’ ও ‘নীল’ শব্দবন্ধনী নর-নারীর আদিম খেলার ইঙ্গিত দেয়। ওদিকে ‘অখণ্ড প্রকৃতির স্বাদ’ পাবার আশায় কবি মুখ রাখেন প্রেমিকার ‘স্তনে’। পাঠক থমকে যান। পরের সম্ভাব্য ক্লাইম্যাক্স কী হতে চলেছে সেটা ভেবে পাঠক হৃদয় আলোড়িত হয়। 

       চিঠির এখানেই শেষ নয়। পরের চিঠিগুলিতে আরও রহস্যময় কাহিনী লুকিয়ে আছে। সেই রহস্য ভেদ করতে পাঠককে এগিয়ে যেতেই হবে। নাহলে ‘প্রেমের পুণ্য তীর্থে…’ কোন রহস্য অপেক্ষা করে আছে সেটা জানা যাবেনা। সেটা জানার জন্য পাঠককে সবগুলো চিঠি পড়তেই হবে। 

       সস্তা ইণ্টারনেটের যুগে সমাজ মাধ্যমেই মানুষ তার সংক্ষিপ্ত মনের ভাব আরও সংক্ষেপে প্রকাশ করছে। রাতের অন্ধকারে গ্রামের অন্ধকার রাস্তায় ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজিয়ে ডাকের ঝোলা পিঠে ঝুলিয়ে রানার আজ ছুটে যায়না ঠিকই, কিন্তু চিঠির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায়না। তাই পাঠক এই এপিস্টোলারির প্রতিটি চিঠি শেষপর্যন্ত পড়বেন সেটা নিশ্চিতরূপে বলা যায়। এখানেই কবি টুম্পা পাল কৃতিত্বের দাবি রাখতে পারেন। 

         আপাতদৃষ্টিতে এটিকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মনে হলেও এটি আসলে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য যা তাদের ভাবতে বাধ্য করবে। ‘ভাইরাস’ যে কাব্য জগতে অচিরেই ভাইরাল হতে চলেছে সেটা বলা যেতেই পারে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )