
শুভেন্দু অধিকারীর বিতর্কিত বয়ানে তীব্র প্রতিক্রিয়া হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর
বাইজিদ মণ্ডল: ডায়মন্ড হারবার:– বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সবকা সাথ সবকা বিকাশ বিরোধী এবং বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার বিরুদ্ধে করা বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন অখিলভারত হিন্দুমহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী। চন্দ্রচূড় বাবুর বক্তব্য একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন জোর দিচ্ছেন সবকা সাথ,সবকা বিকাশ,সবকা বিশ্বাসের উপর তখন ওনারই দলের পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা তখন উল্টো সুরে কথা বলছেন।এতে নিশ্চই পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির পার্টিকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতবর্ষের মাটি সবসময়ই সর্বধর্ম সমন্বয়ের মাটি। বাংলার মাটিতেই সত্যনারায়ণ এবং পীর সাহেবের সংযোগে সত্যপীরের পূজা করা হয়। চন্দ্র বাবুর কোথায়, আমাদের সবার হৃদয়ে বিশ্বমানব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাস করেন এবং আমাদের চেতনাতে অবস্থান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের।কাজেই এই সংস্কৃতিকে আমরা বাদ দিতে পারবো না। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করার অনেক আগে থেকেই বিজেপিতে সংখ্যালঘু মোর্চা বা আর.এস.এস. এ মুসলিম রাষ্ট্রীয়মঞ্চ নামে উইং রয়েছে। তবে হিন্দু মহাসভাতে সংখ্যালঘু মোর্চা বা এস.সি. এস.টি. বা ও.বি.সি. মোর্চা নেই কেন এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ওনার সাফ বক্তব্য প্রকৃত সনাতনীরা চিরদিন সর্বধর্ম সমন্বয় রক্ষা করে এসেছে। আমরাই প্রথম পৃথিবীকে বার্তা দিয়েছি বসুধৈব কুটুম্বকম। আর সেই জন্যই নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের আদর্শ শুধুমাত্র ভারতের মাটিতেই স্বীকৃতি পেয়েছে,পৃথিবীর আর কোনো দেশে তা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। সেই জন্য হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি হিসেবে আমি মনেকরি ভারতের মাটিতে আলাদা করে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু বা সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকাই উচিৎ নয়। রাষ্ট্রের উচিৎ অবশ্যই সকলকে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া। আর প্রত্যেক ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মানুষের উচিৎ পরস্পরকে সম্মান করা। আমি একজন হিন্দু সনাতনী হিসেবে মুসলমান বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষকে ততটাই হৃদয়ের কাছের মনেকরি, যতটা ওনারা আমাকে ওনাদের হৃদয়ে আশ্রয় দেবেন। আমি কোরান বা বাইবেলকে ততটাই শ্রদ্ধা করি যতটা ওনারা আমাদের গীতা, রামায়ণ বা মহাভারতকেও শ্রদ্ধা করেন। আমি নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বা প্রভু যীশুকে ততটাই শ্রদ্ধা করি যতটা ওনারা আমাদের মহাপ্রভু চৈতন্য, ভগবান রামচন্দ্র বা ভগবান কৃষ্ণকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু শুধুমাত্র আমার মতাদর্শ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস সঠিক এবং অন্যদেরটা ভুল এই রকম মতাদর্শই আসলে প্রথমে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় উন্মাদনা এবং শেষে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যা কোনোভাবেই ভারতের মাটিতে অভিপ্রেত নয়। আমাদের সব সময় মনেরাখা উচিৎ যে একটি রক্তদান কেন্দ্রের সংগ্রহ করা ব্লাড স্যাম্পল গুলো নিয়ে আমরা কখনোই বলতে পারবোনা সেই ব্যক্তি হিন্দু নাকি মুসলমান। আমরা এটাও জানিনা সেই ব্যক্তি হিন্দুমহাসভাকে ভোট দেন নাকি তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপিকে। কাজেই আমাদের প্রত্যেকের মাথায় রাখা উচিত যে আমাদের রক্তের রঙ এক এবং আমরা সবাই বৃহত্তর বিশ্বমানবের অংশ মাত্র। ঐহিকে সব ভিন্ন ভিন্ন,অন্তরেতে একাঙ্গী। রামকৃষ্ণ ঠাকুরের কথায় ভগবান, আল্লাহ এবং গডের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ঠিক যেমন জল,পানি এবং ওয়াটার একই বস্তু।