রাজনৈতিক তর্জার ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু মহাসভার জনপ্রিয় দুর্গাপূজার থিম এবার “পথের দাবী , Care Of Footpath”

রাজনৈতিক তর্জার ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু মহাসভার জনপ্রিয় দুর্গাপূজার থিম এবার “পথের দাবী , Care Of Footpath”

বাইজিদ মণ্ডল: কলকাতা:- পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে বাংলার পূজা উদ্যোক্তাদের নিয়ে করা সভার দিনেই নিজেদের পূজার থিম ঘোষণা করলেন অখিলভারত হিন্দুমহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী। অভিনব ও বিতর্কিত থিম নির্বাচনের জন্য বিগত দুই বছর ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল হিন্দুমহাসভার রুবি হাসপাতাল মোড়ের জনপ্রিয় দুর্গাপূজা। প্রসঙ্গক্রমে হিন্দু মহাসভার দুর্গাপূজা এইবছর ষোড়শতম বর্ষে পদার্পণ করলেও রুবি হাসপাতাল মোড়ে স্থানান্তরিত হওয়ার পর এই পূজা এই বছর তৃতীয় বর্ষের। প্রথম বছর এই পূজার থিমে চশমা পড়া টাকমাথা অসুরকে গান্ধীজির মত দেখতে মনে হওয়ায় এবং বিগত বছর NRC ও CAA এর বিরুদ্ধে সনতানীদের জন্য নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দাবি করে এই পূজা ইতিমধ্যেই সারা ভারতবর্ষে বহু চর্চিত বিষয়। তবে এই বছর তাদের পূজার থিম “Care Of Footpath বা পথের দাবী” , অর্থাৎ পূজার উদ্যোক্তা অখিলভারত হিন্দুমহাসভা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সমাজকে বার্তা দিতে চায় “দখল মুক্ত ফুটপাত এবং অনলাইনে বিকল্প ব্যবস্থার”। রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য হিন্দুমহাসভা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ এই পূজার আয়োজন করলেও এই বছর দুর্গা পূজার মঞ্চটির নাম হতে চলেছে “সনাতন ভারত”। কারণ রাজনৈতিক দলের নামে মঞ্চ থাকলে অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা সাধারণ মানুষ খোলামনে পূজায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তিনি আরো বলেন ফুটপাত অবশ্যই মানুষের যাতায়াতের জন্য। তাকে অবৈধ ভাবে প্লাসিক দিয়ে ঘিরে দোকান করলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হয় অন্য দিকে রাস্তাদিয়ে মানুষ হাঁটাচলা করতে বাধ্য হলে রাস্তায় যানজট বাড়ে এবং পথদুর্ঘটনা ঘটে মানুষের প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ে যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ।সেক্ষেত্রে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে অখিলভারত হিন্দুমহাসভা। তবে এটাও ঠিক এই বিষয়ে আরেকটি মানবিক দিকও রয়েছে। যে হকার বন্ধুরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিনিস বিক্রি করে উপার্জন করেন, তাঁদেরও বাড়িতে বৃদ্ধা মা বাবা রয়েছেন, যাঁদের জন্য ওষুধ কিনতে হয়। তাঁদেরও ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে ভর্তি করতে গেলে টাকার প্রয়োজন। এই মেহনতি বুভুক্ষু মানুষ গুলোর পাশেও দাঁড়াতে তৎপর হিন্দু মহাসভার সদস্যরা। তাঁরা ঠিক করেছেন তাঁরা নিজেরা প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে জিনিস কিনে দুই একটি আউটলেট করবেন এবং তাঁদের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা রানার নাম নিয়ে অনলাইন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ফুটপাত বিক্রেতাদের জিনিস নিজেরাই মাধ্যম হয়ে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেবেন। এখানে একদিকে যেমন ফুটপাতের উপর চাপ কমবে, অন্যদিকে অনেক মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা যাবে। স্বেচ্ছাসেবীদের পোশাকে থাকবে মশালহাতে চিঠির ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ডাক হরকরার লোগো। এইরকম নাম এবং লোগো নির্বাচন করার কারণ হিসেবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত “রানার চলেছে” গানটি থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা বললেন ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী। পথে জিনিস বিক্রেতা হকারদের মত দরিদ্র মেহনতি মানুষদের জন্য একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্রও প্রকাশ করতে চলেছেন পূজোর উদ্যোক্তারা যার নাম হতে চলেছে পথের দাবী ।এখানে মেহনতি বুভুক্ষু মানুষদের রোজনামচা, জীবনসংগ্রাম এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সৃজনশীলতা ও সাফল্যের ঘটনা সমাজের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী। এবারের পূজায় সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সমস্ত শ্রমিক সংগঠন এবং হকার উনিয়ন গুলোকে পাশে থাকার আহ্বান জানালেন চন্দ্রচূড় বাবু। নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ দিবস নির্ধারণ উপলক্ষ্যে সভায় চন্দ্রচূড় বাবুর বক্তব্যে খুশি হয়ে হিন্দু মহাসভাকে যে কোন শুভ উদ্যোগে সরকারের পাশে থাকার আহ্বান জানান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এই বছর দুর্গা পূজার উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য আবেদন করতে চলেছে মহাসভা। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিটি পূজা কমিটিকে পঁচাশি হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন চন্দ্রচূড় বাবু। ওনার বক্তব্য এর আগে কখনো কোনো সরকারি অনুদান বা কোনো জায়গা থেকে কোনো আর্থিক সাহায্য ওনারা পাননি। এই বছর যেহেতু মেহনতি মানুষ ও হকার বন্ধুদের পূজা উৎসর্গ করতে চলেছেন ওনারা তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহ সকল জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি ওনাদের পূজার পাশে এসে দাঁড়ালে আখেরে সমাজের সর্ব স্তরের মানুষেরই ভালো হবে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )