আমি অপারগ নীরব নিশ্চুপ
বন্দে বন্দিশ (কলকাতা)

বৈদিক যুগের পরে আর হয়তো পাইনি নারী তার ন্যায্য সম্মান।
মৈত্রেয়ী, অপালা, গার্গী, লোপামুদ্রা সেই যুগে পেয়েছিলো স্বাধিকার মান।
বিবর্তনের পথে যখন দেশ, কাল মান,
অগ্রগতির পথ ধরে এগিয়ে চলার পথ ধাবমান,
ভাগ্যের চাকা গেলো উল্টে পড়লো বাঁধন।
একদিন পুরুষের কাছে নারী ছিলো পূজার আসনে আসীন।
চাকার উর্ধগতি পুরুষের হাতে পেলো প্রভাব প্রতিপত্তি।
সেজেগুঁজে জেগে উঠলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বুৎপত্তি।
পুরুষ ক্ষমতার দম্ভে দিশেহারা, নারীর বরাদ্দে এলো অসীম বর্বরতা,
তবুও –
সহ্য কে নারী করলো জয়, মেনে নিলো হাসিমুখে।আবহমানকাল এইবোঝা বয়ে নিয়ে সংসার নামের দিনগত সুখে।
তবুও তো সময়ের বুকে প্রাচীন পলি সরে সরে –
নতুন দিনের আসন্ন মুহূর্ত কে জানাই সাদর আমন্ত্রণ।
তারপরেও আমি নারী, আমি ধর্ষিত ধর্ষক নামের অনুবীজের।
আমি নারী লুন্ঠিত রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্রান্তের।
আমি হাতবদলের মত্ততায় ভেঙে খান খান।
আমার রূপের মাদকতায় হয়নার হাত টান।
এরপরেও আমার কণ্ঠরোধ,
এ খবর কি রেখেছো সমাজ?
কেনো আমি নীরব নিশ্চুপ জানো??
আমি নারী আমিই নারীকে করি অবমাননা।
সারাবিশ্বের পুরুষের লাঞ্ছনার দায় গিয়ে সমগ্র নারীর দিকে আঙ্গুল তুলছে নারী!
বলোতো নারী?
তোমার বীভৎসতার প্রতিবাদ আমি কেমন করে করি?
কেমন করে তোমার উলঙ্গ শরীরে আমার আঁচল খানি ধরি?
শিক্ষিত সমাজের যে,অতি শিক্ষিত নারী,পুরুষের ত্রাতা ভগবান-
আমি আমাদের করছে কলুষিত অপমান ।
যদি আমি হই ব্যাভীচারী, পুরুষের সদাগরী, পুরুষ নাকি নারীর বিয়ে নামে ব্যবসার পুঁজি?
তাই যদি হবে নারী, কি করে সন্তান ধারণ করি?
কিভাবে পুরুষের জন্যে নির্জলা উপবাস করি?
অসুস্থ পুরুষ সন্তান কিংবা স্বামী অথবা ভাই, দাদাদের রোগ শয্যায় কাটে নির্ঘুম রাত্রির?
নারীর যখন নারীকে আঙ্গুল তুলে-
দাঁড় করায় আসামীর কাঠগড়ায়,
আমি দিশেহারা!আমি নিশ্চুপ!নির্বাক!
আমার ছায়া নারী তোমার হয়ে চলা অপমান দেখে আমার চক্ষু লহুলোহান।
আমি নির্বাক!আমি নির্বোধ!
প্রতিবাদে গর্জে উঠলেই যদি,
আমার জন্যে সমগ্র নারীকে দাগিয়ে দেওয়া হয়,,
এই গর্জন, এই প্রতিবাদ সেও নারীর চক্রান্ত।
আমি নির্বাক, আমি বধির।
আগে এর হোকপ্রতিবাদ, তারপরে নিশ্চই সমগ্র নারীর আঁচল একসাথে গাঁটছড়া বেঁধে,
অবধারিত হবে পায়ে পায়ে সামিল।
আমি নীরব, আমি নিশ্চুপ, আমার নেই কোনো প্রতিবাদ।।