“এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার…”
গোপা মল্লিক (কলকাতা)

রাত্রি আজ সূর্য কে ঢেকে রেখেছে
তমসাচ্ছন্ন মায়াজালে!
চারিদিকে থমথমে অন্ধকার গাঢ় অন্ধকার
ঝ’রে গেল একটি প্রাণ অকালে!
মেয়েটির বয়স মাত্র চব্বিশ পঁচিশ
এত তাড়াতাড়ি বৈধব্যের সাজ কপালে লেখা
সে কি একবারও কল্পনা করতে পেরেছিল তার ভালোবাসার রঙ এতো তাড়াতাড়ি পোড়াবে ওই লেলিহান শিখা!
মেয়েটির দুই বাবার পরিচয় সূত্রে
ছেলেটির সাথে পরিচয় প্রেম বিয়ে
দুই পরিবার যখন নিশ্চিন্ত
চার হাত এক করে দিয়ে।
যখন মেয়েটি একটু একটু করে
স্বপ্নের জাল বুনছে
স্বামীর বুকে মাথা রেখে আদরে সোহাগে
আবেগী মন যখন ভাসছে
ঠিক তখনই বিধাতা সকলের
অলক্ষ্যে বসে বিদ্রুপের হাসি হাসছে
নব বধুর রক্তিম সিঁথির সিঁদুর
তখন কাল চিতায় সাজচ্ছে!
বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে
ছেলেটি হলো মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত
ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়ে
পরিবার হল সর্বসান্ত
অবশেষে যমে মানুষের টানাটানি তে
ছেলেটির একটি হাত বাদ গেলেও
মেয়েটির সিঁথির সিঁদুরের জোরে
ছেলেটি প্রাণে বেঁচে গেল।
ডক্টর বলেছিল ভয় কেটেছে
কিন্তু থাকতে হবে সাবধানে
তবু মনের জোরে সদা হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটি
হার মানেনি জীবনে।
বাইক ছেড়ে সাইকেল চালাতো
বাজার হাট সব-সব করতো
স্বাভাবিকভাবে জীবনের ছন্দে ফিরেছিল
তার ছায়া সঙ্গিনী সর্বদা পাশে আছে তো!
মেয়েটিও সুখী ছিল তার স্বামী কে নিয়ে
এই তো সেদিন পরিবারকে নিয়ে
পুরী গেল তারপর ওরা পাহাড়েও গেল
ওরা বুঝিয়ে দিল ভালোবাসা থাকলে
কোন প্রতিবন্ধকতা ই প্রতিবন্ধকতা নয়।
কিন্তু অদৃশ্য সেই শক্তির কাছে বোধহয়
জীবনকে এইভাবেই হার মানতে হয়
হঠাৎ ছেলেটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
বিচলিত পরিবার ফোরটিসে নিয়ে যায়।
ডাক্তার বলল এ কি এতো দেরিতে আনলেন কেন
বুকে নব্বই পার্সেন্ট জল জমে আছে
কথা দিতে পারছি না চিকিৎসায় যতটুকু সম্ভব
দেওয়ার চেষ্টা করছি বাকিটা ভাগ্যের কাছে।
বত্রিশ বছরের একটি তরতাজা
জীবন সহসা গেল নিভে
লাস্যময় ওই তরুণীর জ্বলজ্বলে সিঁথির সিঁদুর
কর্পুরের মতো গেল উবে।
মেয়েটির বুকফাটা আর্তনাদে
আকাশ বাতাস হলো ধ্বনিত
তার প্রিয় সখা ছেড়ে চলে গেছে
তার ওই হাহাকারে প্রকৃতিও আজ স্তম্ভিত!
বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই
মেয়েটির জীবনে টানাপোড়েন
চার বছর দাম্পত্য জীবনের
সুখ দুঃখের স্মৃতির হলো অবসান।
কি নিয়ে থাকবে এইবার মেয়েটি
বিপদে তার স্বামীকে একটিবারও কাছ ছাড়া করেনি
জুগিয়েছে মনোবল দিয়েছে পরিবারকে আশ্বাস
এক মুহূর্তে ও স্বামী কে ছেড়ে যায় নি।
ওগো নিঠুর নিয়তি নিলে তো কেড়ে কিন্তু
এবার বলো কে বাড়াবে ওই মেয়ের মনোবল!
সমাজ! সংসার! পরিবার ! না কি সময়….
উত্তর দাও বল বল বল…..!?
“যে রাতে মোর দুয়ারখানি ভাঙলো ঝড়ে……….. “