নিয়ামতপুরে পুলিশের লাঠিচার্জ, চাকরির দাবিতে মহিলাদের বিক্ষোভ

নিয়ামতপুরে পুলিশের লাঠিচার্জ, চাকরির দাবিতে মহিলাদের বিক্ষোভ

কৌশিক মুখার্জী: কুলটি:-


পশ্চিমবঙ্গের নিয়ামতপুরে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) চিনাকুড়ি কয়লাখনিতে স্থানীয়দের চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত মহিলাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও চারজনকে আটকের ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে স্থানীয় বাসিন্দারা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন, যা এলাকার পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিনাকুড়ি কয়লাখনিতে কয়লা উত্তোলনের কাজ বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়ার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা, বিশেষ করে যুবক ও মহিলারা, চাকরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এই দাবির সমর্থনে বৃহস্পতিবার কয়লাখনি চত্বরে মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিক অখিল মুখার্জীর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই মহিলাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং চারজন মহিলাকে আটক করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মহিলা পুলিশ কর্মী ছাড়াই এই হামলা চালানো হয়, যা পুলিশের নিয়মের  লঙ্ঘন।
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এলাকাবাসী নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশের এই আচরণ গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। স্থানীয় বাসিন্দা সুজাতা মাঝি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অধিকারের কথা বলছিলাম। কিন্তু পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের উপর লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হতে পারে না।” সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ কর্মকর্তারা লাঠি হাতে মহিলাদের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। এই ভিডিও ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ফাঁড়ির এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা কেবল আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। কোনো লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি।” তবে ভিডিও প্রমাণ এই দাবির বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে, যা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। চিনাকুড়ি কয়লাখনিতে স্থানীয়দের চাকরির দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বেসরকারি সংস্থার হাতে কয়লা উত্তোলনের কাজ দেওয়ার পর থেকে স্থানীয় যুবক ও মহিলাদের চাকরির সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এলাকার বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল বলেন, “আমাদের এলাকার সম্পদ আমাদেরই জীবিকার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু বাইরের সংস্থা এসে আমাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, আর পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর হামলা করছে।” বিক্ষোভকারীরা আটককৃত মহিলাদের অবিলম্বে মুক্তি এবং দায়ী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সমাজকর্মী মীনা দেবী বলেন, “চাকরির দাবিতে আন্দোলন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। পুলিশের এই দমনমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনা বাড়াবে। আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই।” এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বা কয়লাখনি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে ভিডিও ফুটেজের সত্যতা তদন্তের দাবি জোরালো হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। নিয়ামতপুরের এই ঘটনা শুধু পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্নই নয়, বরং স্থানীয়দের অর্থনৈতিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের স্বাধীনতার বিষয়টিকেও সামনে এনেছে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে এবং দায়ী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রশাসন ও কয়লাখনি কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ এলাকার পরিস্থিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )