মাইথন স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড কারখানার দুর্ঘটনায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণে শান্ত হল পরিস্থিতি, তবু দায়বদ্ধতার প্রশ্ন অমীমাংসিত

মাইথন স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড কারখানার দুর্ঘটনায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণে শান্ত হল পরিস্থিতি, তবু দায়বদ্ধতার প্রশ্ন অমীমাংসিত

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

মাইথন স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড (এমএসপিএল) কারখানায় বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো শ্রমিক সঞ্জয় কুমারের পরিবারকে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।দুর্ঘটনার পর শ্রমিকরা ও পরিবার মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভে বসেছিলেন।কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর এই ক্ষতিপূরণে সিদ্ধান্ত হয়। তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং নিরপেক্ষ তদন্তের অভাব নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ এখনও অটুট রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ,মৃতের পরিবার, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ব্লক সভাপতি মনোজ তিওয়ারি এবং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি ভোলা সিংয়ের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ক্ষতি পূরণের বিষয়ে মীমাংসা হয়। মৃত শ্রমিক সঞ্জয় কুমারের স্ত্রী সঞ্জু কুমারী, তিন নাবালক সন্তান এবং বৃদ্ধ পিতামাতার ভরণপোষণের জন্য ১২ লক্ষ টাকার এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই টাকা আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সঞ্জু কুমারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার লিখিত আশ্বাস দেওয়া হয়। এছাড়া, তাৎক্ষণিক খরচের জন্য ৫০ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ইএসআই এবং পিএফ-এর অধীনে প্রায় ৭ লক্ষ টাকার বকেয়া এবং সঞ্জু দেবীকে আজীবন পেনশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।মীমাংসার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মৃতদেহ জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর পরিবার মৃতদেহ নিয়ে নিজ বাসস্থানে ফিরে যায়, যেখানে শ্রমিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানা যায়।ব্লকের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ব্লক সভাপতি মনোজ তিওয়ারি জানান, বারাবনি বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের নির্দেশে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও মৃতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মৃত শ্রমিক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, তাই এই ক্ষতিপূরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।” তবে, তিনি কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রবন্ধনের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছেন। শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, ক্ষতিপূরণ দিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।এলাকায় শ্রমিকদের জীবনের মূল্য কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ কতদিন ক্ষতিপূরণের আড়ালে তাদের অবহেলা লুকিয়ে রাখবে? এই দুর্ঘটনা শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার প্রতি অবহেলার একটি বড় চিত্র তুলে ধরেছে। শ্রমিক সংগঠন এবং স্থানীয়রা নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা যায়।মাইথন স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ঘোষণায় পরিস্থিতি সাময়িকভাবে শান্ত হলেও, কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া হবে, নাকি ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে অবহেলা আড়াল করা হবে?এই প্রশ্ন এখন গোটা এলাকায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )