পথিকের গান
সোমা ঘোষ (কলকাতা)

“পাষাণ হৃদয় তাই আজও গলেনি”…
মিষ্টি বাতাস, গন্ধরাজের গন্ধে চারিদিক বিভোর, যেন এক অদৃশ্য সৌন্দর্যময় অনুভব, একটা মধুর কন্ঠস্বর ভেসে আসছিল…
কে যেন গাইছে “আমার মনের এই ময়ূর মহলে এসো আজ প্রেমের আতর ঢেলে দাও”…
উফফফফ্…. কিযে ভালো লাগছিল
চকিতে বোঝা গেল কেউ একজন সম্মুখে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছে,
“ভালোলাগে ভালোলাগে ভালোলাগে”
তাকে প্রশ্ন করি.. কিছু বলছেন?
আবার একই কথা “ভালোলাগে”
মনে মনে ভাবলাম, এ কেমন বোকা বোকা ব্যাপার ‘ভালোলাগে’ আবার একটা উত্তর হলো!
অগত্যা গন্তব্য স্থলের দিকে এগিয়ে যেতেই হলো।
কিছুদিন এভাবেই কেটে যায়, আবারো এক পড়ন্ত বিকেলে বড় রাস্তার মোড়ে সেই পথিক..
এবার কানে এলো “আমি যে কে তোমার তুমি তা বুঝে নাও, আমি চিরদিন তোমারই তো থাকবো , তুমি আমার আমি তোমার” ..
মনটা উদাস হলো, সেই পথিকের গানের ভেলায় ভাসতে ইচ্ছা থাকলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছিল তাই আর শোনার উপায় ছিলনা।
অকস্মাৎ কিছুটা এগিয়ে এসে বললো “ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি”
আবারও মন ভাবতে বাধ্য হলো, পাগল নাকি!?
এভাবেও ভালোবাসি বলা যায়!
এমন করে আবার ভালোবাসা হয় নাকি?
ভালোবাসা কি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়?
নির্ঘাত পাগল! মস্ত পাগল!
বাড়ির দিকের রাস্তায় পা বাড়াতেই , বলে উঠলো .. “তোমাকেই বলছি গো একটা গান শুনবে গো”
বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিরামহীন বলে চলেছে
“তোমাকে গান শোনাবো, তোমার জন্য কবিতা লিখবো, তুমি যা চাও তাই এনে দেব, পাহাড়, সমুদ্র, নদী যা চাও!
দূর থেকে একটু ভালবাসতে চাই , একটু দেখতে চাই, তোমায় নিয়ে কবিতা লিখতে চাই, গান গাইতে চাই, ছবি আঁকতে চাই।”
আবার ……..
মন ভাবতে লাগলো, আচ্ছা পাগল তো! প্রলাপ বকতে শুরু করলে থামেই না!
এরই মধ্যে সময় অনেকটাই বয়ে গেছে, রাত্রি বেশ গাঢ় হয়েছে, ভয় লাগতে শুরু করলো।
মনে হচ্ছিল এখান থেকে বের হবার উপায় কি?
যদি পথ আটকায়! যদি জোর খাটায়!
না সেই পথিক সেদিন পথ আটকায়নি, কোনো জোর খাটায়নি… শুধু বলেছিল “তুমি চলে গেলে আর কবিতা লেখা হবে না, আর গান গাওয়া হবে না, কিন্তু ভালোবাসাটা রয়েই যাবে….. হোকনা একতরফা তবুও থাক”।
“তুমি যাও, চলে যাও”..
ফিরতে হয়েছিল, একটা অদেখা, অজানা কষ্ট দলা পাকাচ্ছিল।
মন ভাবছিল পথিক কি অসুস্থ ছিল!
নাকি তার ভালোবাসাকে গুরুত্ব না দেওয়াটা অপারগতায় মোড়ানো ছিল!?….
তার গাওয়া শেষ গান বাতাসে ভেসে আসছিল
পাষাণ হৃদয় তাই আজও গলেনি , সত্যি হৃদয় হলে গলে যেত”।