চন্দ্র গ্রহণ

মৌসুমী মণ্ডল (কলকাতা)

অনেক বছর আগে,কোনো এক গ্রামে বাস করত রূপা নামের এক কিশোরী। রূপা ছিল খুব কৌতূহলী আর স্বপ্নবিলাসী। সে প্রতিদিন রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ আর তারা গুনত। তার দাদু তাকে বলতেন, “চাঁদ হচ্ছে রাতের রানী, সে আমাদের পাহারা দেয়।”দাদু তাকে রাতের আকাশে কালপুরুষ,সপ্তর্ষি মন্ডল চেনাতেন।

একদিন গ্রামের সবাই শুনল, রাতে চন্দ্রগ্রহণ হবে। রূপা কখনো চন্দ্রগ্রহণ দেখেনি, তাই সে খুব উত্তেজিত হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। সন্ধ্যা নামতেই সে উঠোনে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল। ধীরে ধীরে চাঁদের ওপর ছায়া পড়তে শুরু করল। চাঁদ যেন অদ্ভুত এক লালচে রঙে রূপ নিল।

রূপা বিস্ময়ে দেখল, চাঁদ ঢেকে যাচ্ছে। তার মনে পড়ল দাদুর গল্প—“রাক্ষসেরা নাকি চাঁদকে গিলে ফেলে, তাই চন্দ্রগ্রহণ হয়।” রূপা একটু ভয় পেল, কিন্তু স্কুলে দিদিমণি বলেছেন, এটা প্রকৃতির খেলা।যখন সূর্য,পৃথিবী আর চাঁদ এক সরল রেখায় আসে তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে।তখন ই চন্দ্রগ্রহণ হয়। সে চুপচাপ বসে রইল, আর ভাবল, চাঁদ নিশ্চয়ই আবার ফিরে আসবে।

গ্রামের বড়রা ঢাক-ঢোল বাজাতে লাগল, কেউ কেউ মন্ত্র পড়তে লাগল। রূপা দেখল, কিছুক্ষণ পর চাঁদ আবার ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। চাঁদ যেন নতুন আলোয় জ্বলে উঠল। রূপা খুশি হয়ে দাদুকে বলল, “দাদু, চাঁদ তো ফিরে এসেছে!”

দাদু হাসলেন, “হ্যাঁ রূপা, চাঁদ কখনো হারিয়ে যায় না। সে শুধু মাঝে মাঝে লুকিয়ে পড়ে, আবার ফিরে আসে আমাদের কাছে।”

সেই রাতের পর থেকে রূপা বুঝে গেল, প্রকৃতির সব ঘটনাতেই লুকিয়ে আছে রহস্য আর সৌন্দর্য। চন্দ্রগ্রহণ তার কাছে হয়ে উঠল এক চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )