
আজও অবহেলিত পশ্চিমবঙ্গ
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:- যতই এইরাজ্যের একদল বাঙালি নিজদের নির্লজ্জ রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য রাজ্যকে অপরের কাছে ছোট করার মত নিন্দনীয় খেলায় মেতে উঠুক পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু নিজের যোগ্যতায় বারবার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে চলেছে। জন্মলগ্ন থেকেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে হেয় করার চেষ্টা চললেও আজও চক্রান্তকারীরা সফল হতে পারেনি। সর্বশক্তি নিয়োগ করেও বিজেপি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এইরাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। স্বপ্ন ছিল দুই শতাধিক আসন দখল করা, তিন অঙ্কও ছুঁতে পারেনি। অতীতেও অবশ্য কোনো বিরোধী দলের আসন সংখ্যা তিন অঙ্ক ছিলনা। যাইহোক, হারের জ্বালা ভুলতে না পেরে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় রীতিনীতি জলাঞ্জলি দিয়ে এরপর থেকেই কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি শুরু হয় বিমাতৃসুলভ আচরণ। কার্যত শুরু হয় অলিখিত অর্থনৈতিক অবরোধ। প্রথম আঘাত নেমে আসে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে। গ্রামীণ মানুষের রোজগার সুনিশ্চিত করার জন্য সদ্যপ্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে এই প্রকল্প শুরু হয়। দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের প্রাপ্য বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংসদে দেওয়া সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে সমগ্র দেশজুড়ে দুর্নীতি হয়েছে এবং বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যের দুর্নীতির পরিমাণ এই রাজ্যের থেকে বেশি হলেও তাদের বরাদ্দ বন্ধ হয়নি। অবশ্য বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে দেশের গরীব মানুষ। এদের একটা অংশ তো বিজেপিকেও ভোট দিয়েছিল! পরের ধাক্কাটা ছিল 'আবাস যোজনা' প্রকল্পে দুর্নীতি। এখনো দেশের বহু মানুষের মাথার উপর ছাদ নাই। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড সহ অপরের বাড়ির খোলা বারান্দায় তাদের জীবন কেটে যায়। দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রকল্পেও কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ। এক্ষেত্রেও দেখা যায় দেশের 'ডবল ইঞ্জিন' এর রাজ্যগুলির দুর্নীতির মাত্রা বেশি হলেও সেইসব রাজ্যে বরাদ্দ বন্ধ হয়নি। যদিও কখনোই এটা কাম্য নয়। এই দুটি প্রকল্পে এইরাজ্য সহ সমগ্র রাজ্যে দুর্নীতি হয়েছে এটা কোনো শাসকদল কখনোই অস্বীকার করতে পারবেনা। দুর্নীতি তো সাধারণ মানুষ করেনি? তাহলে তার দায় তাদের নিতে হবে কেন? একাধিক কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি এইরাজ্যে দুর্নীতির তদন্ত করতে এলো, তাদের পেছনে বহু অর্থ ব্যয় হলো। অথচ আজও ফলাফল জানা গেলনা। সবচেয়ে লজ্জাকর ভূমিকা এইরাজ্যের বিজেপি সাংসদের। সেদিনও তাদের সংখ্যা ১৮ ছিল। বরাদ্দ পুনরায় চালু করার জন্য তাদের কোনো অর্থবহ ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। উল্টে বরাদ্দ বন্ধ করার জন্য কে কেন্দ্র সরকারকে বা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছে সেটা নিয়ে চলল নির্লজ্জের মত গর্ব প্রকাশ। অন্যরা যখন নিজ নিজ রাজ্যের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছে এরা তখন উল্টো কাজ করছে। ফলে ২০২৪ সালেও এইরাজ্যের গরীব মানুষ এই দুটি প্রকল্পের জন্য প্রাপ্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত থাকল। যদিও সম্প্রতি রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে এদের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে শীর্ষ কর্তা সহ অন্যান্যদের কর্তব্যে অবহেলার জন্য। অথচ শিকার হচ্ছে যারা কোনো অপরাধ করেনি সেইসব গরীব মানুষ। যে এলাকায় দুর্নীতি হবে তার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সেই এলাকার সমস্ত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ রাখা হোক। দায় যদি সরকারি কর্মীদের হয় তাদের জন্যেও একই শাস্তি বরাদ্দ হোক। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিজেপির এই আচরণ অনেকটা 'দরবারে হেরে বাড়িতে বসে মাগ ঠ্যাঙানো'-র মত। এরফলে ভবিষ্যতে বিজেপিকে যদি 'আঞ্চলিক সর্বভারতীয় দল' বলা হয় তাতে কোনো অত্যুক্তি হবেনা।