
বনভোজনে মেতে উঠতে চলেছে সমগ্র বাঙালি, হারিয়ে যাচ্ছে আবেগ
রিমা ঘোষ, ফাইনাল এক্সপোজার-:
মরশুমী সব্জীর মত শীতের আমেজ গায়ে মেখে বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বনভোজন করার আনন্দটাই আলাদা। অন্য সময় সেই আনন্দটা পাওয়া যায়না। কোনো এক ছুটির দিন দেখে বাড়ির বাইরে একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে বাড়ির সবাইকে বা বন্ধুদেরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরাই রান্নাবান্না করে সারাদিন আনন্দ, হইহুল্লোড় করে খাওয়া-দাওয়াকেই বনভোজন বলা হয়। আগেকার দিনে গ্রামের মানুষজনেরা গরুর গাড়ি বা সাইকেলে চেপে গ্রামের বাইরে কাছাকাছি মাঠে বা কোনো জঙ্গলের ধারে দল পাকিয়ে বনভোজন করত। এখন দিন বদলের সাথে সাথে বনভোজন করার পদ্ধতিও পাল্টে গেছে। বর্তমান সময়ে বনভোজন আর সেভাবে দেখা যায় না। ‘রথ দেখা ও কলা বেচা’-র মত বনভোজনের জন্য অনেকে বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন পিকনিক স্পট, ঘন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়তলি বা সমুদ্র সৈকত। এতে হয়তো ঘোরাঘুরি হয় ঠিকই, বনভোজনের আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়না।
আরও অনেক পরিবর্তনের মত বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বনভোজনের পরিবর্তে ‘ফিস্ট’ শব্দটি বেশি ব্যবহার করে। বনভোজন কেবল শীতকালে মানালেও ফিস্ট বছরের যেকোনো সময় করা যায়। ঘরের বাইরে ক্লাব বা খেলার মাঠে বন্ধুবান্ধবরা রান্না করে হৈচৈ করে খাওয়াকে ফিস্ট বলা হয়। সেখানে অবশ্য বনভোজনের পরিচিত ফ্লেভার পাওয়া যায়না।এখন আবার তারা পিকনিক বলার প্রচলন শুরু করেছে। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে।
পিকনিকের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট। সেখানেই সবাই হৈহৈ করে ছুটে চলেছে পিকনিক করতে। সঙ্গে থাকছে ডিজের তালে তালে উদ্দাম নৃত্য। ফলে অতীতে বনভোজনের সঙ্গে যে কালচার যুক্ত থাকত আজ সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে। সব কেমন যেন কৃত্রিম! তবে গ্রামের দিকে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা এখনো বনভোজনের কালচারটা ধরে রেখেছে।
এভাবেই নাম ও কৃষ্টি পরিবর্তনের হাত ধরে একের পর এক অতীতের পরিচিত কালচারগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সব যেন কেমন কৃত্রিম হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই হয়তো রক্তের মানুষ যন্ত্রমানব রোবটে পরিণত হবে। সেদিন আসতে বেশি দেরি নাই।