কারণ অকারণ
চিত্রা কুণ্ডু বারিক (কলকাতা)

"আজকালকার ভীষণ বাস্তব সত্য নিয়ে এই লেখাটি। কোনো কাল্পনিক নয়। চোখে দেখা কিছু সত্য যা দেখে মন কেঁদে ওঠে।।"
"ভালবাসা" কথাটা আজকাল ভীষণ সাধারণ। কিন্তু তার মানে বোঝা ভীষণ কঠিন। বরং দেখাশোনা করে বিয়ে এটাই এখন খুবই আশ্চর্য ব্যাপার। রাস্তা ঘাটে উপচে পড়েছে এই ভালোবাসা নামক শব্দটি। সেদিন একজনের কাছে শুনতে পেলাম এখন এটা কোনো ব্যাপার না এটা নাকি স্ট্যাটাস। প্রেম না করলে সমাজ হাসে। টিউশন, স্কুল, কলেজ যাওয়া এসবে একজন বডিগার্ড তো লাগেই তার সাথে একটু মনের মানুষ পেলে তো কথাই নেই। বাবা মা এরা তো সবসময়ের সঙ্গী তাই তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে নাকি আর ভালো লাগে না। সুতরাং মনের কথা বলতে গেলে একটা নতুন মানুষ পেলে ক্ষতি কি ! পাবলিক প্লেসে দশজন দেখে বলবে আহা কি সুন্দর মানিয়েছে।
তারপর ধীরে ধীরে ডুব সাগরে ডুবে ফিরে আসা। তখন সব শেষ করেই নির্লজ্জ হতেও এদের বাধে না। বিবেকের দংশন এদের স্পর্শ করে না।
এভাবে কত সংসার দিনের পর দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। জোর করে বাবা মায়ের অমতে পালিয়ে বিয়ে করে বছর খানেক সংসার করে । তখন তাদের মনে হয় প্রেম যেন গলানো সোনা। মেয়েরা মনের মানুষ পেয়ে , তারপর নতুন বাবা মা পেয়ে প্রথম প্রথম কত উঁচু গলায় বলতে থাকে, "ওই তো আমার বাপের বাড়ি কেউ মেনে নিতে পারেনি কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ি কতটা ভালবাসার জায়গা করে দিয়েছেন। ভীষণ খুশি আমি (মেয়েদের ক্ষেত্রে)। স্বামী ও ভীষণ ভালো আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। আমি রাজরানী হয়ে আছি (শুনে শয়তান হাসে )।"
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কোল জুড়ে এলো মিষ্টি একটা সন্তান। তার কিছুদিনের মধ্যেই স্বামী নামক শব্দটি হঠাৎ করে উড়ে যায়। শুরু হয় সবথেকে ভালবাসার শাশুড়ি নামক শব্দটির গঞ্জনা, তার মতো নাকি অসভ্য মহিলা হয় না। ননদ থাকলে তো কথাই নেই।
শুনতে পায় স্বামী নাকি আর চায় না তাকে । কারণ আগের মতো সুখ সে স্ত্রীর কাছে পায়না। তাই অন্য নারীত্বে জড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে কয়েক বছর অশান্তি, তারপর যোগাযোগ শুরু হয় নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে। বলতে থাকে বাবা আমি বুঝতেই পারিনি ,"এরা এমন মানুষ হতে পারে।"
গালমন্দ, মানসিক চাপ, সবথেকে বড় কথা বদনামের শিকার হয়েছি। বিশ্বাস করে ভালবাসার পরিণাম পেয়েছি। ঠিক মতো না খেয়ে তাদের দিয়েছি।
কিন্তু আজ আমার ভালবাসা অনেক দূরে চলে গিয়েছে। দিনের পর দিন রাতে নেশা করে ফিরে আসে চলতে থাকে অত্যাচার।
বাবা আমার কাছে ভালবাসা বলে আর কিছু নেই সবটুকু নিংড়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। শুধুমাত্র কর্তব্য পালন করে চলেছি। ডিভোর্স চাই কিন্তু তোমার সম্পত্তির লোভ আছে তাই রেহাই দেয় না। আর আমিও কোন মুখে তোমার কাছে ফিরে যাবো বাবা! তোমাদের নামে সেসময় যত পেরেছি বানানো মিথ্যে বলেছিলাম। দোষী আমি নিজে। মানুষ হতে পারিনি। আজ আমার এই সন্তান বুঝিয়ে দিয়েছে আমার অন্যায়।