
“সন্তুষ্ট নই…” আরজি কর মামলায় সিবিআই-এর তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বললেন রাজ্য পুলিশ মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করত
সংবাদদাতা: মুর্শিদাবাদ:-
“আমাদের হাতে থাকলে অনেক আগেই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা যেত”
শিয়ালদহ আদালতে আর জি কর মামলার দোষী সঞ্জয় রায়কে, নৃশংস ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পরই সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও দলের অবস্থান স্পষ্ট করে জানালেন যে দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিৎ ছিল। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, রাজ্য পুলিশ ৬০ দিনের মধ্যেই এমন মামলায় মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করেছে।
মুর্শিদাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন “আমি সংবাদ মাধ্যম থেকে রায়ের কথা শুনেছি। আমরা সবসময় মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছি এবং এখনও সেই দাবিতেই অবিচল রয়েছি। তবে এটা আদালতের সিদ্ধান্ত এবং আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারি না। তিনটি অন্য মামলায় রাজ্য পুলিশ ৫৪-৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করেছে। এটা গুরুতর মামলা। যদি এটা আমাদের হাতে থাকত, আমরা অনেক আগেই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে পারতাম।”
২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট আরজি কর মামলা সিবিআই হাতে নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করতে পাঁচ মাস সময় নেয়। অন্যদিকে, এর বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ জয়নগর, ফরাক্কা এবং হুগলির মতো মামলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ৫০-৬০ দিনের মধ্যেই অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করেছে।
এই মামলার তদন্ত ও বিচারে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ’দিন বলেন, “আমি জানি না সিবিআই কীভাবে এই মামলা পরিচালনা করেছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে। যদিও আমরা বলেছিলাম যে প্রয়োজনে আমরা মামলা হস্তান্তর করব, তবুও আমাদের থেকে জোর করে মামলা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের সবসময় মূল লক্ষ্য ছিল দোষীর জন্য কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করা। এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই।”
সিবিআই-এর তদন্ত চলাকালীন, অনেকেই দাবি করেছিলেন যে রাজনৈতিক চাপে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্তে বিলম্ব করেছে। যার ফলে তাদের দক্ষতা নিয়েও একাধিকবার গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। এর বিপরীতে, কলকাতা পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু স্পষ্ট এবং প্রাথমিক গ্রেপ্তারের পরও ১৩ অগাস্ট রাজনৈতিক চাপের কারণে মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তারপর এমন বিলম্ব হয় যা বিচারের প্রতি অনেকের বিশ্বাসে চিড় ধরায়।
সিবিআই, ২০২৪ সালের ১৪ অগাস্ট তদন্তের দায়িত্বভার নেওয়ার প্রায় দু’মাস পর ৭ অক্টোবর চার্জশিট জমা দেয়। এই দুই মাসের ব্যবধান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠে, কারণ কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করেছিল। সিবিআই আর কোনও নতুন অভিযুক্তকে চিহ্নিতও করতে পারেনি। এরপর ৪ নভেম্বর সিবিআই অভিযোগ গঠন করে, এবং অবশেষে ১১ নভেম্বর, ২০২৪ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। বিচার শেষ হতে সময় লাগে ২০২৫ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত, যার ফলে দ্রুত গ্রেফতারির পরেও প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা সিবিআই-এর এই বিলম্বিত তদন্ত প্রক্রিয়া তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
পুরো দেশ যখন এই চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকাহত, তখন বিজেপি এবং সিপিআই(এম) এই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতেও পিছপা হয়নি। অপরাধ, তার উদ্দেশ্য এবং অভিযুক্ত সম্পর্কে তাদের রটানো প্রতিটি মিথ্যে বয়ান, প্রথমে কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এবং পরে সিবিআই-এর অনুসন্ধানে একের পর এক খণ্ডিত হয়েছে।
এই জঘন্য অপরাধের পর রাজ্য সরকার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলির সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করে এবং চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ৩ সেপ্টেম্বর, বাংলার সরকার “অপরাজিতা বিল” পাশ করে, যা নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধে দ্রুত ও কঠোর শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি। তবে বিজেপি, যারা প্রায়ই “বেটি বাঁচাও”-এর মতো স্লোগান ব্যবহার করে, তারা এই বিল নিয়ে কৌশলগতভাবে নীরবই থেকেছে। এখনও সর্বোচ্চ স্তরে বিলটি অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকলেও এ নিয়ে তারা মৌনব্রত পালনে ব্যস্ত। নিজেদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপির এই নীরব থাকা নারী-সুরক্ষার বিষয়ে তাদের প্রকৃত আগ্রহের অভাবকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।