
‘আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস’-এ বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোলবাসী
রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জ্জী, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান-: মানব সমাজের বিবর্তনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাঠামো পরিবার হলো সমস্ত সদস্যের সবচেয়ে নিরাপদ ও নিশ্চিত জায়গা। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার দৃঢ় বন্ধনের ভিত্তিতে পরিবার গড়ে ওঠে। পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ছোটখাটো সমস্যা সহজেই মিটিয়ে নিতে পারে। পরিবারের এই বন্ধনের দিকে লক্ষ্য রেখে ১৯৯৩ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ১৫ মে দিনটি 'আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে। লক্ষ্য প্রতিটি পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা। এরজন্য প্রতিবছর আলাদা আলাদা থিম বেছে নেওয়া হয়। এবছরের থিম হলো 'টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবার-ভিত্তিক নীতি : সামাজিক উন্নয়নের জন্য দ্বিতীয় বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনের দিকে'। কিন্তু প্রচলিত আইন ভাঙার জন্য ওরা তো পরিবারের সদস্যদের থেকে অনেক দূরে জেলখানায় বা সংশোধনাগারে বন্দী। ফলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগের কোনো সুযোগ থাকেনা। এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য 'আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস' উপলক্ষ্যে ওদের জন্য যৌথভাবে বিশেষ ব্যবস্থা করল জেলা আইনি কর্তৃপক্ষ ও আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। ১৬ ই মে আসানসোল সংশোধনাগারে আসেন আসানসোলের এসডিও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, ডিসি সেন্ট্রাল এবং জেলা আইনি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আম্রপালি চক্রবর্তী, জেল সুপার চাইন্দ্রি হাইট সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট পাঁচটি পরিবারের সদস্যদের জেলের ভেতর প্রবেশ করানো হয় এবং দেখা করানো হয় জেলে বন্দী থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে। প্রসঙ্গত এদের মধ্যে চার জন বিচারাধীন বন্দী ও একজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে বন্দী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চোখ দিয়ে একটানা জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর পর একজন মা ও তার ছোট মেয়ের মিলন দৃশ্য দেখে উপস্থিত কেউই চোখের জল আটকাতে পারেননি। এমনকি মুহূর্তের জন্য আধিকারিকরা বিচলিত হয়ে পড়েন। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত। এসডিও বলেন- আজ বন্দীদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়দের সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে পেরে ভাল লাগছে। কিন্তু মা-মেয়ের মিলন দৃশ্য কোনোদিনই ভুলবনা। জেল সুপার বলেন- জজ সাহেব ও জেলা আইনি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার দৃশ্য কখনো ভোলা যাবেনা। মা-মেয়ের মিলনের সময় যে আবেগের সৃষ্টি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। জেলা আইনি সেলের সচিব আম্রপালি চক্রবর্তী বলেন - অল্প সময়ের জন্য হলেও মা-মেয়ে, বাবা-সন্তানের মধ্যে সাক্ষাতের সুযোগ করিয়ে দিতে পেরে আমরা খুশি।