সুপ্ত ‘লাবণ্য’
সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

ছেলেটির সাথে প্রথম দেখা প্রিন্সেপ ঘাটের এক আলো আঁধারিতে
সুদর্শন, সুপুরুষ তীব্র আকুতিতে জড়ানো
চোখে চোখ পড়তেই কেমন একটা ভালো লাগার টান অনুভব হলো
কাছাকাছি এক মোবাইলের রিংটোনে বেজে উঠলো
‘প্রেমেরও জোয়ারে ভাসাবে ….’
সন্ধ্যার মোহনীয় আলোর মায়ায় নদীও প্রেমে পড়ে
আমি তো মানবী মাত্র!
ছেলেটি এগিয়ে এসে হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিলো
একটু রাত হতেই শুরু হলো মিষ্টি ফোনালাপ
এতদিন কোথায় ছিলো এত কথা?
কোথায় ছিল এমন সম্মোহনী ক্ষমতা??
আমরা কথার সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছি
ছেলেটি আবার দেখা করার বায়না ধরলো
আমার বুকে তখন ক্যালিফোর্নিও স্রোত
ভালোলাগার উথাল পাথাল সুনামী,
গভীর রাতে না ঘুমিয়ে আয়না নিয়ে নিজেকে দেখতে থাকলাম
বহুদিন ভালো করে সাজগোজ করা হয়নি
চোখের নিচে হালকা ডার্ক সার্কেল
মুখের চামড়া কোঁচকানো
সারারাত ধরে লাবণ্য খুঁজে পেলাম না এক বিন্দু
ছিঃ ছিঃ লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে
এমন লাবণ্যহীন মুখে দেখা করতে যাওয়া কি মানায়?
পরদিন এই ভাবনা আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করলো
সন্ধ্যা হতেই ভাবনা আর ভালোলাগার টানাপোড়েনে পৌঁছে গেলাম সেই ঘাটের কাছে
সেখানে তখন জোড়ায় জোড়ায় কপোত-কপোতী
সবাই গভীরভাবে নিমগ্ন প্রেমের স্বর্গে,
আমরাও দুজনে হাতে হাত রেখে গল্প করতে লাগলাম
এভাবে কতটা সময় কেটেছে খেয়াল নেই
হঠাৎ কানের কাছে একজোড়া ঠোঁটের আনাগোনা
ফিসফিস করে বললো ‘দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে একটা চুমু তো হতেই পারে’
আমি ছিটকে গেলাম হাতখানেক দূরে
সম্পর্ক শুরুতেই শরীর!
না, না এ হতে পারেনা
সামনে এক গঙ্গা ভর্তি জল
তীরে দাঁড়ানো বুকে ‘আর্কিমিডিস’
আমি চিৎকার করে বললাম ‘ইউরেকা ইউরেকা’
গতকাল সারারাত ধরে লাবণ্য খুঁজেছিলাম মুখের রেখায়
আজ অন্তরে ‘লাবণ্য’ কে পেয়ে গেলাম
একটুও দ্বিধা না করে উল্টোদিকের রাস্তা ধরলাম
ছেলেটি তখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে
একটা সহজলভ্য চাহিদার মাঝখানে জ্বলজ্বল করে উঠলো ব্যক্তিত্ব
আমরা বিভক্ত হলাম
আমরা বিভক্ত হলাম সীমারেখা টেনে।